হাড়ের সমস্যা নির্ণয়ে বিএমডি টেস্ট ও ভিটামিন ডি টেস্ট কতটা জরুরি

হাড়ের সমস্যা নির্ণয়ে বিএমডি টেস্ট ও ভিটামিন ডি টেস্ট কতটা জরুরি

হাড়ের যেকোনো সমস্যা নির্ণয় ও হাড়ের প্রকৃত অবস্থা জানতে বোন মিনারেল টেস্ট ও ভিটামিন ডি টেস্ট অতি জরুরি দুটো স্বাস্থ্য পরীক্ষা। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, অস্টিওপেনিয়া, অস্টিওপোরোসিস, হাড়ের ফ্রাজিলিটি ফ্র্যাকচার—প্রভৃতি জানার জন্য বিএমডি টেস্ট করা হয়। অন্যদিকে শারীরিক সুস্থতার অপরিহার্য উপাদান ভিটামিন-ডি। এর ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শরীরের হাড় ও অস্থিসন্ধি। পাশাপাশি ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি ক্যানসার, দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস এবং হৃদযন্ত্রঘটিত নানাবিধ জটিলতা তৈরি করে। তাই দেহে ভিটামিন-ডি’র পর্যাপ্ত উপস্থিতি আছে কি না, তা জানার জন্যই প্রয়োজন হয় ভিটামিন-ডি টেস্ট।

বিএমডি টেস্ট

বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট কী

বিএমডি টেস্ট হচ্ছে বিশেষ ধরনের স্বল্প মাত্রার এক্সরে পরীক্ষা। এর মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব, শক্তিমত্তা ও সক্ষমতা নির্ণয় করা হয়। এতে কোনোরূপ শারীরিক ক্ষতির আশংকা নেই বললেই চলে। DXA পরীক্ষা দ্বারা হাড়ের ঘনত্ব বা বিএমডি পরীক্ষা করা হয়। WHO এর তথ্য অনুযায়ী পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতি ৩ জন মহিলা ও প্রতি ৫ জন পুরুষেরই হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, যাকে অস্টিওপরোসিস বলে। ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং সামান্য আঘাতে বা বিনা আঘাতেই হাড় ভেঙে যায়। হাড় ভেঙে যাওয়ার পর মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে যায় এ কারণে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিসকে নীরব ঘাতক বলা হয়।

বোন মিনারেল ডেনসিটি পরীক্ষা কেন প্রয়োজন

মূলত বিএমডি টেস্ট দ্বারা হাড়ের সামগ্রিক অবস্থা জানা যায়। আরো নির্দিষ্টভাবে বললে, নিম্নোক্ত কারণে এই টেস্ট করা হয়—

  • হাড় কতটা মজবুত বা ভঙ্গুর অবস্থায় আছে তা নির্ণয় করা।
  • বয়স্কদের হাড়ের যেকোনো অস্ত্রোপচারের পূর্বে হাড়ের সক্ষমতা নির্ণয় ও অস্ত্রোপচার পরিকল্পনার জন্য।
  • হাড়ক্ষয়জনিত রোগ অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওপেনিয়া নির্ণয়ের জন্য।

এসব রোগের চিকিৎসা-পরবর্তী অবস্থা জানার জন্য দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্ন খাদ্য-উপাদানের মাত্রা, ওষুধের মাত্রা এবং নিয়মিত শরীরচর্চার ধরন ও মাত্রা ঠিক করার জন্য।

যাদের বিএমডি টেস্ট দরকার

  • পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী বা পুরুষ।
  • যাদের পরিবারে অস্টিওপোরোসিস ও হাড় ভাঙার ইতিহাস আছে
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও অন্যান্য ক্যান্সার আছে এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা পাচ্ছে
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে যাদের।
  • যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন

ভিটামিন-ডি টেস্ট

কখন দরকার ভিটামিন-ডি টেস্ট

দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি হলে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ডায়াবেটিস, ডিমেনসিয়া ও আলঝেইমার রোগের সাথেও ভিটামিন-ডি’র ঘাটতির সম্পর্ক আছে।

নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ভিটামিন-ডি টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।

  • শরীরব্যথা
  • হাড়ে ব্যথা
  • কোমরব্যথা
  • পেশিতে ব্যথা
  • অতিরিক্ত দুর্বলতা
  • চেয়ারে বসতে ও উঠতে ব্যথা
  • শরীরে শক্তি কম পাওয়া
  • জয়েন্টে ব্যথা
  • ক্লান্তি ও অবসন্নতা
  • অতিরিক্ত চুলপড়া
  • মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ না করা

শরীরে কতটুকু ভিটামিন-ডি প্রয়োজন?

একজন ব্যক্তির দেহে কতটুকু ভিটামিন-ডি প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার বয়সের ওপর। বয়সভেদে এর মাত্রা কমবেশি হয়ে থাকে। সাধারণত একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে দৈনিক ১৫ মাইক্রোগ্রাম বা ৬০০ ইউনিট ভিটামিন-ডি দরকার। কিন্তু সত্তরোর্ধ্ব মানুষের জন্য দরকার ২০ মাইক্রোগ্রাম বা ৮০০ ইউনিটের বেশি।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে ভিটামিন-ডি টেস্ট

গবেষণা বলছে, আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের দেহে ভিটামিন-ডি’র অভাব। গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হয়েও বাংলাদেশে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতির অন্যতম কারণ হচ্ছে সূর্যালোকে কম থাকার প্রবণতা, খাদ্যাভ্যাস ও অসচেতনতা। কখনো কখনো উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরেও অনেকে বুঝতে পারেন না সমস্যাগুলো কেন হচ্ছে। ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি সম্পর্কে সচেতন না থাকলে এটি বোঝা কঠিন। তাই নিয়মিত হেলথ চেকআপের সঙ্গে ভিটামিন-ডি টেস্ট করিয়ে এর মাত্রা জেনে নেওয়া জরুরি। শরীরে ভিটামিন-ডি’র সঠিক মাত্রা জানতে এবং সুস্থ থাকতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্দিষ্ট সময় পরপর ভিটামিন-ডি পরীক্ষা করিয়ে নিন।


অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ সহিদুল ইসলাম

এমবিবিএস, এমএস (অর্থো) ডি. অর্থো;
এফএসিএস (আমেরিকা); এও ফেলো (সুইজারল্যান্ড)
সাবেক অধ্যাপক ও একাডেমিক পরিচালক,
নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল), ঢাকা
সিনিয়র কনসালট্যান্ট; অর্থোপেডিক্স, ট্রমা ও স্পাইন সার্জারি
ল্যাবএইড ক্যানসার হসপিটাল অ্যান্ড
সুপার স্পেশালিটি সেন্টার

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp