হাড় প্রতিস্থাপনের নতুন অধ্যায়
দেহের প্রতিটি হাড়ের কাজ ও প্রয়োজন আলাদা। তাই যেকোনো একটি অংশের হাড়ের সমস্যা হলে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হতে পারে। দুর্ঘটনা, রোগ বা অন্য কোনো কারণে হাড়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি হাড় অকেজো হয়ে যেতে পারে। বর্তমান আধুনিক চিকিৎসাজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে হাড়ের চিকিৎসায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও হাড়ের উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়েছে। হাঁটু, কনুই, কোমর ও কাঁধের সফল প্রতিস্থাপন এখন দেশেই সম্ভব। শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়ের প্রতিস্থাপন আর নতুন কিছু নয়, এটি এখন বেশ পরিচিত বিষয়। হাড়ের প্রতিস্থাপন দুই ধরনের—
১. আংশিক জয়েন্ট প্রতিস্থাপন
২. সম্পূর্ণ জয়েন্ট প্রতিস্থাপন
হাড়ের জয়েন্ট প্রতিস্থাপন কী?
দেহের অকেজো বা প্রায় অকেজো হাড় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পরিবর্তন বা সংযুক্ত করে দেওয়াকে হাড়ের জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপন বলা হয়।
যাদের প্রয়োজন—
- রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত
- পোস্ট ট্রম্যাটিক আর্থ্রাইটিস বা আঘাতের ফলে সৃষ্ট বাত
- অস্টিওনেক্রোসিস বা হাড় ভেঙে যাওয়া
- ছোটোবেলায় কোনো আঘাত পাওয়া
- অস্টিওআর্থ্রাইটিস (শেষ পর্যায়)
স্বাভাবিক জীবনযাপন বা চলাফেরার জন্য সুস্থ-স্বাভাবিক হাড়ের বিকল্প নেই। তাই হাড়জনিত যেকোনো সমস্যায় দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেকেই হাড়ের সমস্যায় আক্রান্ত বয়স্ক রোগীদের অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ ভেবে চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহী থাকেন। তবে দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় বিছানায় শুয়ে থাকলে ফুসফুসের সমস্যা, বেডসোর প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। পরবর্তীকালে সেই রোগীর চিকিৎসা বেশ জটিল হয়ে ওঠে। তাই প্রতিস্থাপনকে ঝুঁকিপূর্ণ না ভেবে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
হাড়ের জয়েন্ট প্রতিস্থাপন কখন প্রয়োজন?
- আঘাতজনিত কারণে হাড়ের জয়েন্ট অকেজো হয়ে গেলে
- শরীরের জোড়ার হাড়ের রক্ত সঞ্চালন কমে বা বন্ধ হয়ে জয়েন্ট অকেজো হয়ে গেলে
- রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসজনিত কারণে জয়েন্টে সমস্যা হলে
- মেরুদণ্ডের হাড়ে জটিলতার কারণে কোমরের সমস্যা হলে
- অস্টিওআর্থ্রাইটিস-জনিত কারণে হাড়ের জয়েন্টে সমস্যা হলে
- হাড়ের জয়েন্টে যক্ষা (টিবি) হলে
- দুর্ঘটনাজনিত কারণে হাড় বা জয়েন্ট ভেঙে গেলে
হাঁটুর সমস্যা ও কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন
হাঁটুর সন্ধিস্থলে কোনো সমস্যা হলে দৈনন্দিন কাজকর্ম এমনকি হাঁটাচলা করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। হাঁটুর জটিলতা নিয়ে অস্বাভাবিকভাবে হাঁটলে পায়ের ও হাড়ের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বয়স্কদের হাঁটুর সমস্যার প্রধান কারণ হাড়ক্ষয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ক্ষয় বেড়ে চলে। এছাড়া উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি হলেও হাঁটুর সমস্যা দেখা দিতে পারে। একপর্যায়ে হাঁটু অকেজো হয়ে পড়তে পারে।
বিভিন্ন চিকিৎসায় যখন হাঁটুর সমস্যা নিরাময় করা যায় না তখন উপায় হলো হাঁটুর কৃত্রিম প্রতিস্থাপন। স্বল্প পরিসরে হলেও হাঁটুর প্রতিস্থাপন এখন বাংলাদেশে সফলভাবেই হচ্ছে। আধুনিক এই চিকিৎসার মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের দুয়েকদিন পর থেকেই রোগী হাঁটাচলা করতে পারেন এবং সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে চলতে সপ্তাহখানেক সময় লাগে।
প্রতিস্থাপনের পর করণীয়
রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে পাঁচ-সাত দিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। সাধারণত এক-দুই দিনের মধ্যেই রোগী উঠে বসতে, দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারেন। তবে শুধু ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেই রোগী উঠে দাঁড়াবেন বা ওয়াকার দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করবেন। টয়লেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে হাই-কমোড ব্যবহার করবেন। বাসায় ফিরে যাওয়ার পরেও নিয়মিত একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সহযোগিতায় ব্যায়াম করবেন। সাধারণত ৯০ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার সফল হয়ে থাকে। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকের নির্দেশনামতো ফলো-আপ করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু
এমবিবিএস, এমএস (অর্থো), ফেলো, আর্থ্রোস্কপি অ্যান্ড রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি (ইউকে),
ফেলো, আর্থ্রোস্কপি অ্যান্ড স্পোর্টস মেডিসিন (ভারত)
এক্স চেয়ারম্যান, হেড (প্রধান) অর্থ্রোপেডিক সার্জারি বিভাগ
অর্থোপেডিক, ট্রমা, আর্থোস্কপি অ্যান্ড আর্থোপ্লাস্টি সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
চেম্বার : ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল।