হৃদ্রোগ চিকিৎসায় এনজিওপ্লাস্টি,পেসমেকার ও বাইপাস সার্জারির পররোগীদের করণীয়
ডা. আ প ম সোহরাবুজ্জামান
করোনারি এনজিওপ্লাস্টি, পেসমেকার ও বাইপাস সার্জারি হৃদ্রোগের অত্যন্ত পরিচিত চিকিৎসাপদ্ধতি। রোগের ধরন, মাত্রা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এগুলো দেওয়া হয়ে থাকে। এই চিকিৎসাগুলোর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে রোগীকে বেশ কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। বিশেষত চিকিৎসা গ্রহণের পরবর্তী সময়টা রোগীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে জীবনযাপনে যেমন সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তেমনই মেনে চলতে হয় কতগুলো বিধিনিষেধ। একটু এদিক-ওদিক হলে চিকিৎসা ব্যর্থ হতে পারে। রোগী অধিকতর জটিল অবস্থায় পড়ে যেতে পারেন। রোগের সর্বোচ্চ নিরাময় নিশ্চিত করতে এবং চিকিৎসা-পরবর্তী জটিলতা কমাতে নিম্নোক্ত নির্দেশনাবলি অনুসরণ করা জরুরি।
এনজিওপ্লাস্টির পর করণীয়
সাধারণত এনজিওপ্লাস্টির ছয় ঘণ্টার মধ্যেই রোগী হাঁটাচলা করতে পারেন। এক থেকে দুই দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বাড়ি যাওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রোগীকে নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে হবে।

- উঁচু-নিচু জায়গায় নয়, মসৃণ বা সমতল জায়গায় হাঁটাহাঁটি করবেন। প্রথম দুই-তিন দিন সিঁড়িতে ওঠানামা করবেন না।
- শরীরচর্চা, ভারী জিনিস বহন করা, কোনো কিছু নিচ থেকে ওপরে তোলা, গাড়ি চালানো, খেলাধুলা—অন্তত দুই দিন এসব বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে।
- অন্তত এক সপ্তাহ শারীরিক মিলন থেকে দূরে থাকতে হবে।
- প্রথম এক সপ্তাহ গোসল বা সাঁতার এড়িয়ে চলবেন। প্রয়োজনে গোসল করা যেতে পারে, তবে সার্জারির ক্ষতস্থানটি যেন না ভেজে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ২৪-৪৮ ঘণ্টা জায়গাটি শুকনো রাখতে হবে।
- পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে হাত-পা নাড়াচাড়ার ব্যাপারেও লক্ষ রাখতে হবে।
- ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত বের হলে বা স্থানটি ফুলে গেলে বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে শুয়ে পড়ুন এবং লক্ষ রাখুন ওই স্থানে যেন চাপ না লাগে।
- অবস্থা যদি বেশি খারাপ হয়, যেমন—রক্ত বন্ধ না হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব, মাথা ঘোরা, জ্বর আসা, হৃৎস্পন্দনে হেরফের, শ্বাসকষ্ট—প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পেসমেকার ব্যবহারকারীর জন্য করণীয়
- বুকের যে পাশে পেসমেকার লাগানো সে পাশের হাত দিয়ে ভারী কিছু তুলবেন না।
- পেসমেকার লাগানো স্থানে খোঁচাখুঁচি বা মালিশ করবেন না।
- চুম্বকীয় ও বৈদ্যুতিক তরঙ্গ থেকে নিরাপদ দূরে থাকতে হবে। মুঠোফোন, কানফোন, ধাতু নির্ণায়ক প্রভৃতি এড়িয়ে চলতে হবে। মুঠোফোন অন্তত ছয় ইঞ্চি দূরে রাখবেন।
- যে পাশে পেসমেকার, সে পাশের বুকপকেটে মুঠোফোন রাখবেন না। এমনকি মুঠোফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে ওই পাশের কানে মুঠোফোন ধরবেন না। অর্থাৎ ডান পাশে পেসমেকার থাকলে বাঁ পাশের কানে মুঠোফোন রেখে কথা বলবেন।
- বিমানবন্দর, বড়বাজারের মতো জায়গায় নিরাপত্তা তল্লাশির সময় ধাতু নির্ণায়ক এড়িয়ে চলুন।
- আঁটসাঁট জামাকাপড় পরবেন না।
- বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি-কাশি, হেঁচকি, ওজন বৃদ্ধি, পা ফোলা—প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
বাইপাস সার্জারির পর করণীয়
- চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে সতর্কভাবে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করবেন এবং এরপর শুকিয়ে নেবেন।
- একই জায়গায় একই ভঙ্গিতে পনেরো মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
- ভারী জিনিস ওঠানো-নামানো, কোনো কিছু ধাক্কা বা টান দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অধিক গরম বা ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলবেন।
- ক্ষতস্থান পুরোপুরি শুকানোর আগপর্যন্ত সাঁতার কাটবেন না।
- ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সুস্থ হওয়ার আগপর্যন্ত তা এড়িয়ে চলতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে। অধিক লবণ ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
- সার্জারির পর হালকা হাঁটাচলা শুরু করতে হবে। তবে গাড়ি চালানো, দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানো যাবে না।
- চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করতে হবে।

ডা. আ প ম সোহরাবুজ্জামান
এমবিবিএস, এমডি, এফসিপিএস
অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল
সম্মানিত ফ্যাকাল্টি, স্কুল অফ হেলথ সায়েন্স
স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ