হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট : খালি মাথায় চুলের বুনন

হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট : খালি মাথায় চুলের বুনন

-ডা. মোঃ কামরুল হাসান চৌধুরী

বয়স বেড়ে গেলে চুল পড়ে যায়। অনেকের আবার অল্প বয়সেই চুল পড়তে শুরু করে। তার মানে, চুল পড়ার ক্ষেত্রে বয়সই প্রধান কারণ নয়। নানা কারণে চুল পড়তে পারে। কখনো বংশগত ও হরমোনের কারণে টাক পড়ে। সাধারণত পুরুষের মাথার সামনের অংশে বা উপরিভাগে টাক দেখা দেয়। মেনোপজের পর নারীদের মাথার চুল পাতলা হতে থাকে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পুষ্টির অভাব, মানসিক উদ্বেগ ও দুর্ঘটনায় মাথার চুল ঝরে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট হতে পারে কার্যকর সমাধান। প্রতিস্থাপন করা চুল কাটা যায়, কার্ল করা যায়। এমনকি এখান থেকে নতুন চুলও গজায়।

চুল প্রতিস্থাপন কী

মাথার সামনের অংশের চুল আগে ঝরে যায়। এই অংশকে বলা হয় টেম্পোরাল এরিয়া। আর মাথার পেছনের অংশ এবং কানের দুই পাশের অংশের চুল সাধারণত স্থায়ী হয়। এই অংশের চুল তুলনামূলক কম পড়ে। তাই একে বলা হয় পার্মানেন্ট এরিয়া বা ডোনার এরিয়া। সার্জারির মাধ্যমে ডোনার এরিয়া থেকে চুলের ফলিকল তুলে এনে মাথার টাক অংশে বসানো হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভ্রু, গোঁফ বা দাড়িতেও চুল প্রতিস্থাপন করা যায়।

চুল প্রতিস্থাপনের ধরন

তিন পদ্ধতিতে চুল প্রতিস্থাপন করা যায়।

১. ফলিকিউলার ইউনিট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন : এই পদ্ধতিতে মাথার পেছনের ও কানের দুই পাশের অংশ থেকে ফলিকল কেটে সামনের টাক অংশে বসানো হয়। সাধারণত আধা ইঞ্চি পরিমাণে গ্রাফট সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ব্যবচ্ছেদ করে তা প্রতিস্থাপন করা হয়।

২. ফলিকিউলার ইউনিট এক্সট্রাকশন : মাইক্রোমোটরের সাহায্যে ডোনার এরিয়া থেকে একটি একটি করে চুল তুলে এনে টাক অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিতে টাক অংশের ত্বক ছিদ্র করে সেখানে চুল বসানো হয়।

৩. ডাইরেক্ট হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন : এই পদ্ধতিতে একটি কলম সদৃশ যন্ত্র বা হ্যান্ডপাঞ্চ ব্যবহার করে প্রতিটা চুল আলাদা করে তোলা হয় এবং প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিতে সময় বেশি লাগলেও জটিলতা কম।

চুল প্রতিস্থাপনে বিবেচ্য বিষয়

প্রতিস্থাপিত চুল কতটা সুন্দর বা দৃশ্যমানভাবে দেখতে প্রাকৃতিক হবে তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। ডোনার এরিয়ার চুল যদি ঘন থাকে তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে পাতলা ও কালো রঙের চুলের চেয়ে ধূসর বা ফিকে রঙের ঘন চুল ভালো ফল দেয়। প্রতিস্থাপনের পর চুলের গোড়া শক্ত হতে এবং নতুন চুল গজাতে নয় মাস সময় লাগতে পারে। চুল প্রতিস্থাপনে ধূমপায়ীদের জন্য কিছুটা জটিলতা আছে। তাই ধূমপান ত্যাগ করা জরুরি। প্রতিস্থাপনের পর ধারাবাহিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হতে পারে।

চুল প্রতিস্থাপনের পর করণীয়

সার্জারির ধরনের ওপর প্রতিক্রিয়ার তারতম্য হতে পারে। প্রতিস্থাপনের পর কিছু শারীরিক অসুবিধা বোধ হতে পারে। যেমন—এক বা দুইদিন মাথায় ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে রাখা লাগতে পারে। এতে অস্বস্তি হতে পারে। সাময়িকভাবে আঘাত পাওয়া বা ফুলে যাওয়ার মতো অনুভূতি হওয়া, মাথার ত্বকে আঁটসাঁট অনুভূতি হওয়া, চুল প্রতিস্থাপিত অংশগুলোতে ছোটো ছোটো স্ক্যাব দেখা যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলো সাধারণত অল্প কিছুদিনেই ঠিক হয়ে যায়। তবে প্রতিস্থাপনের পর নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা আবশ্যক—

  • চুল প্রতিস্থাপনের পর চিকিৎসকের সব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
  • ব্যায়াম বা শারীরিক অনুশীলন থেকে বিরক্ত থাকতে হবে।
  • অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করতে হয় এমন কাজে রক্তের চাপ বেড়ে গিয়ে ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। এই ধরনের কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • প্রতিস্থাপনের পর চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
  • রক্তপাত, তীব্র ব্যথা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী

ডা. মোঃ কামরুল হাসান চৌধুরী

এমবিবিএস, ডিসিডি, এমএসসি (ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজি)
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন (ইউকে)
চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি অ্যান্ড হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল
ধানমন্ডি, ঢাকা

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp