অনিয়ন্ত্রিত ওজনে স্বাস্থ্যঝুঁকি

-ডা. এম সাইফুদ্দিন

সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্য চাই শারীরিক সুস্থতা। সুস্থ থাকতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মতান্ত্রিক জীবন, পরিমিত ওজন। যারা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন না, খাবারের ক্ষেত্রে অনিয়ম করেন এবং শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলেন, খুব সহজেই তাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমে যায়। স্থূলতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার এই সমস্যাকে বলা হয় ওবেসিটি। ওবেসিটি এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, হৃদ্‌রোগ প্রভৃতি সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ওবেসিটি বা স্থূলতাকে।

অনিয়ন্ত্রিত ওজনের ক্ষতিকর প্রভাব

ওজন মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে দেহের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। শারীরিক ও মানসিক নানা রোগসহ দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। অল্প পরিশ্রমেই ভর করে ক্লান্তি। দেহের ওজন বহন করে অস্থিসন্ধি। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত ওজন বহন করার কারণে অস্থিসন্ধির পরিবর্তনসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়। মেরুদণ্ড, কোমর, হাঁটুতে ব্যথা বা প্রদাহ হতে পারে। অতিরিক্ত ওজনের ফলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাতের ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে পিত্তথলিতে পাথর হয়। এ ছাড়া যকৃতের জটিল রোগ ফ্যাটি-লিভার বা যকৃতে চর্বি জমে পরবর্তীকালে লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে।

খাদ্যনালি, অন্ত্র, যকৃৎ ও স্তন ক্যানসারের সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষত, চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের স্থূলতার কারণে ক্যানসার হতে পারে। স্থূলতার কারণে ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, নাকডাকা ও হৃদ্‌রোগ হতে পারে। এ ছাড়াও বন্ধ্যাত্ব, মানসিক নানান সমস্যা, হার্নিয়ার ঝুঁকি, ত্বকের সমস্যা ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে অতিরিক্ত ওজন।

যেসব কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ হারায়

নানান কারণে ওজন বাড়তে পারে। নিষ্ক্রিয় থাকা, শারীরিক পরিশ্রম না করা ও খাবারের অনিয়ন্ত্রণকেই এর মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়।

  • ক্যালরিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ
  • শারীরিক পরিশ্রম না করা
  • একই স্থানে বসে একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করা
  • মানসিক চাপ
  • অনিদ্রা
  • অতিরিক্ত কোমল
  • পানীয় পান
  • বংশগত কারণ।

২০১৩ সাল থেকে স্থূলতা একটি রোগ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।

কম খেলেও বাড়ছে ওজন

পরিমাণে কম খেলেও ওজন বাড়তে দেখা যায় অনেকের। এ ক্ষেত্রে ধীরে খাবার হজম হওয়াকে দায়ী করা যেতে পারে।
যারা সারা দিন বাসায় বসে থাকেন, একই স্থানে বসে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন ও টেলিভিশন দেখেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। শারীরিক পরিশ্রম না করলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে আইসক্রিম, চকলেট, বার্গার, পাস্তা, পিৎজা ইত্যাদি ফাস্টফুডে অভ্যস্ত। এসব খাবারে উচ্চমাত্রায় ক্যালরি থাকে। এসব খাবার অল্প খেলেও শরীরে অধিক মাত্রায় ক্যালরি জমা হয়। ফলে, পরিমাণে কম খেলেও ওজন বেড়ে যায়।

প্রতিরোধ

  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম
  • পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ
  • ফাস্টফুড পরিহার
  • পর্যাপ্ত ঘুম
  • মানসিক চাপমুক্ত থাকা
  • উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ না করা
  • ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।

অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। জাংকফুড পরিহার করে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার গ্রহণ। অনেক সময় খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনলে ওজন কিছুটা কমে কিন্তু সেটি ঠিক থাকে না। এটি ধরে রাখতে চাই নিয়মিত শরীরচর্চা। সীমিত খাবার ও শরীরচর্চা করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে না এলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।


ডা. এম সাইফুদ্দিন

ডা. এম সাইফুদ্দিন
এমবিবিএস (ডিএমসি), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন)
এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি) বারডেম, এফআরসিপি (আয়ারল্যান্ড), এফআরসিপি (গ্লাসগো), এফআরসিপি (এডিনবার্গ),
এফএসিই (ইউএসএ), এফএসিপি (ইউএসএ),
এফআরএসএম (ইউকে). ট্রেনিং ইন অ্যাডভ্যান্স এন্ডোক্রাইনোলজি (সিঙ্গাপুর, মায়ো ক্লিনিক ইউএসএ)
ফেলোশিপ ট্রেনিং (হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল,
ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল)
ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হরমোন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর (ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp