অবহেলায় বাড়ে পাইলসের জটিলতা

অবহেলায় বাড়ে পাইলসের জটিলতা

অধ্যাপক ডা. মোঃ মামুনুর রহমান

পাইলস হতে পারে যে কারও। এটি মলদ্বারের অতিপরিচিত একটি রোগ। সাধারণত মলদ্বারের রোগসমূহের লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকে। তবে, এ রোগের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু নিদর্শন। কিন্তু এটি মলদ্বারসংক্রান্ত রোগ হওয়ায় অনেকেই লজ্জায় পরিবারের কাছে বলতে পারেন না। ফলে জটিলতা আরো বাড়তে থাকে। আবার, কেউ ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজের ওপর ভরসা করে ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনেন। এসব সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সবচেয়ে বেশি জরুরি এ রোগ- সম্পর্কিত করণীয়গুলো জেনে রাখা। লজ্জা না পেয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে সার্জারি বা অস্ত্রোপচার ছাড়াই এ রোগে ভালো থাকা যায়।

পাইলস কী

সাধারণত মানুষের মলদ্বার থেকে ২-৩ ইঞ্চি ভেতরের অংশে থাকে রেক্টাম। আর রেক্টামের নিচের অংশ ও মলদ্বার ঘেঁষে থাকা রক্তনালিগুলোকে বলা রেক্টাল ভেইন। কোনো কারণে এসব রক্তনালি ফুলে গেলে কিংবা এতে প্রদাহ শুরু হলে পাইলস রোগের সূত্রপাত হয়। শুরুতে এর লক্ষণ হিসেবে শুধু মলের সঙ্গে রক্ত আসে। কিন্তু জটিলতা আরো বাড়তে থাকলে মলত্যাগের সঙ্গে পাইলসের কুণ্ডলীও বাইরের দিকে বের হয়ে আসে। এ সময় রক্তপাতের পাশাপাশি মলদ্বারে চুলকানি ও ব্যথা হয়।

পাইলসের কারণ

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। তা ছাড়া, স্থূলতা, যকৃতের রোগী, বৃহদন্ত্রের প্রদাহ, বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যানসারের রোগী, মলদ্বারের পূর্বের কোনো অপারেশন ও আইবিএসের রোগীদের পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে, নিচের কারণগুলো পাইলসের পেছনে প্রধানত দায়ী—

  • দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া।
  • মলত্যাগের সময় জোরে চাপ প্রয়োগ করা।
  • দীর্ঘদিন ধরে ভারী বস্তু নিচ থেকে ওপরে তোলার কাজ করা।
  • আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া।

পাইলসের ধরন

অভ্যন্তরীণ পাইলস : মলদ্বারের ভেতরের দিকের পাইলসকে অভ্যন্তরীণ পাইলস বলা হয়। যদিও পর্যায়ক্রমে মলত্যাগের সময় এর কুণ্ডলী বাইরের দিকে বের হয়ে আসতে থাকে। তবে, প্রথম দিকে এটি নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে গেলেও, পরবর্তীকালে হাতের সাহায্যে তা চাপ দিয়ে ঢোকাতে হয়। এতে কোনো ব্যথা হয় না। শুরুতে লক্ষণ হিসেবে শুধু মলের সঙ্গে রক্ত পড়ে।

বহিঃস্থ পাইলস : মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে থাকা পাইলসকে বহিঃস্থ পাইলস বলে। এতে চুলকানি ও ব্যথা হয়। একজন মানুষের একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পাইলাস দুটোই থাকতে পারে।

পাইলসের নানা পর্যায়

পাইলসের রয়েছে চারটি ধাপ বা পর্যায়। যেমন :

  • প্রাথমিক ধাপে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কিছু থাকে না। শুধু রক্তপাত হয়।
  • দ্বিতীয় ধাপে রক্তপাতের পাশাপাশি মনে হয় মলদ্বারে কিছু বের হয়ে এসেছে, তা আবার ভেতরে ঢুকে যায় আপনাআপনি।
  • তৃতীয় ধাপে মলত্যাগের পর বের হয়ে আসা মাংসপিণ্ড এমনিতে আর ভেতরে ফিরে যায় না। চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।
  • চতুর্থ ধাপের পাইলসে বের হয়ে আসা অংশটি আর ভেতরে ঢোকে না।

লক্ষণ ও উপসর্গ

  • মলত্যাগের পর রক্তপাত হয়। টয়লেট পেপার, মলের মধ্যে কিংবা কমোডে এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
  • পাইলসের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
  • মলদ্বারে চুলকানি হয়।
  • বসা অবস্থায় মলদ্বারে ব্যথা অনুভব করা
  • মলত্যাগের সময় ও পরে তীব্র অস্বস্তিভাব

রোগ নির্ণয়

সাধারণত লক্ষণ ও উপসর্গ শুনেই পাইলস সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তবু, পুরোপুরি নিশ্চিত হতে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। প্রক্টোস্কোপি পরীক্ষা পাইলস নির্ণয়ে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পাইলসের অবস্থা, অবস্থান এবং পর্যায় সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানা যায়। এ ছাড়া, সিগময়েডস্কপি ও কোলনোস্কোপি পরীক্ষার মাধ্যমেও পাইলস নির্ণয় করা যায়।

প্রতিরোধে করণীয়

  • খাদ্যতালিকায় রাখুন আঁশযুক্ত ও সহজপাচ্য খাবার। তৈলাক্ত ও মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • শক্ত খাবারের পরিবর্তে নরম ও তরল খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খাওয়ার সময় খাবারগুলো ভালো করে চিবিয়ে নেবেন।
  • প্রতিদিন শরীরের প্রয়োজনমাফিক পানি পান করুন।
  • মলত্যাগের সময় সতর্ক থাকুন। মল বের করার জন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
  • দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে কাজ করবেন না। নিয়মিত বিরতিতে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করতে পারেন।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন।
  • পাইলসের লক্ষণ দেখা দিলে, কবিরাজ ও ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট করবেন না। এতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
  • পাইলসের যেকোনো লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিলে, কালবিলম্ব না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মোঃ মামুনুর রহমান

অধ্যাপক ডা. মোঃ মামুনুর রহমান
এমবিবিএস (ঢাকা), এফসিপিএস (সার্জারি)
এমআরসিএস (এডিন, ইউকে), এফএসিএস (অামেরিকা)
ফেলো ইন মিনিমাল অ্যাকসেস সার্জারি (এফএমএএস)
অ্যাডভান্স ল্যাপারোস্কোপিক কোলোরেক্টাল, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ও জেনারেল সার্জন
অধ্যাপক ও প্রধান, সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ,
ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
চেম্বার : ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp