কখন করবেন করোনা পরীক্ষা

ডা. এ.এস.এম জুলফিকার হেলাল

দ্রুত টেস্ট, দ্রুত শনাক্ত, দ্রুত আইসোলেশন এবং দ্রুত চিকিৎসা; এই চারটি ‘দ্রুত’ সূত্রের ওপরই নির্ভর করছে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ভাইরাসটির প্রধান শক্তি মূলত এর ‘অতি-সংক্রমণ ক্ষমতা’। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। যত দিন যাচ্ছে, নতুন নতুন ধরন বের হচ্ছে। প্রতিটা ধরনই আগের চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং সংক্রামক হয়ে দেখা দিচ্ছে। যদিও সময় এবং ভাইরাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষও মানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সার্বিকভাবে ঝুঁকি কমছে এ কথা বলার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে অন্যজনকে ঝুঁকিতে না ফেলে, এজন্য সংক্রমণের সম্ভাবনা বা উপসর্গ দেখা দেওয়া-মাত্র পরীক্ষা করানো জরুরি।

আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে অন্যজনকে ঝুঁকিতে না ফেলে,
এজন্য সংক্রমণের সম্ভাবনা বা উপসর্গ
দেখা দেওয়া-মাত্র পরীক্ষা করানো জরুরি।

কখন করবেন করোনা পরীক্ষা
নিম্নোক্ত লক্ষণসমূহ খেয়াল রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে তীব্রতাভেদে এক বা একাধিক লক্ষণ ৫ থেকে ৬ দিনের বেশি সময় ধরে কারো মাঝে উপস্থিত থাকলে তার করোনা পরীক্ষা করা জরুরি

  • জ্বর
  • গা হাত পায়ে ব্যথা
  • গলা ব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া
  • পেটের সমস্যা
  • কানের সমস্যা
  • বুকে ব্যথা
  • বুকে কফ জমা
  • শুকনো কাশি
  • স্মৃতিবিভ্রম ঘটা
  • বমি বা বমিভাব
  • পাতলা পায়খানা
  • প্রচন্ড ঘাম হওয়া
  • মাথাব্যথা, মাথাঘোরা
  • হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়
  • মুখ বা শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • স্বাদ ও গন্ধ চলে যাওয়া
  • শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া
  • দুর্বলতা

যে পরীক্ষাগুলো করাবেন
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে কি না তা জানতে প্রথমেই আরটি-পিসিআর (RT-PCR)- টেস্ট করাতে হবে। এতে রিপোর্ট পজিটিভ এলে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

আরটি পিসিআর
করোনা নির্ণয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য টেস্ট আরটি পিসিআর টেস্ট। এই পরীক্ষায় গলার ভেতর এবং নাকের গোড়া থেকে লালা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষাটিকে রিয়াল টাইম পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন বা ‘রিয়াল টাইম পিসিআর’ বলা হয়। সংগৃহীত নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী পজিটিভ নাকি নেগেটিভ তা বোঝা যায়।

চিকিৎসা চলাকালে রোগীর শরীরের স্বাস্থ্যগত অবস্থার উন্নতি অবনতি হতে পারে। তাই কোভিড রোগীর শারীরিক অবস্থা জানতে এবং পরবর্তীকালে চিকিৎসাসেবার সুবিধার্থে আরো কতগুলো টেস্ট করানো উচিত। আরটি-পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি রোগী সত্যিই করোনায় আক্রান্ত কি না এবং আক্রান্ত হলে ফুসফুস ঠিক কী পরিমাণ সংক্রমিত হয়েছে তা নির্ণয় করার জন্য নিম্নোক্ত টেস্টগুলো করানো দরকার।

  • এইচআরসিটি
  • কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি)
  • সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি)
  • ডি ডাইমার

এইচআরসিটি
এই পরীক্ষাটি মূলত ফুসফুসের অবস্থা জানার জন্য করা হলেও করোনা নির্ণয়ে এর গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সময় করোনা টেস্টে রোগীকে করোনামুক্ত মনে হলেও উপসর্গ থেকে যায়। সেক্ষেত্রে সঠিক অবস্থা জানতে এই পরীক্ষাটি বেশ কার্যকর।

সিবিসি
কেবল করোনাভাইরাসই নয়, যেকোনো সংক্রমণ নির্ণয়ে এই টেস্ট কার্যকর। ব্লাড সেল বা রক্ত কণিকার কাউন্ট বা পরিসংখ্যান দেখার জন্য এটি করা হয়।

সিআরপি
দেহ কোনো সংক্রমণের শিকার হয়েছে কি না সেটি বোঝার জন্য সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি) টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ। হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি নির্ধারণেও এই টেস্টটি সাহায্য করে থাকে।

ডি ডাইমার
ডি-ডাইমার একটি প্রোটিন। এটি রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি মাপার একটি একক। সাধারণত এটি দশক থেকে শতকের হিসেবে মাপা হয়। কিন্তু কোভিড রোগীর শরীরে রক্তের স্তর কখনো কখনো ৬০,০০০, ৭০,০০০ বা ৮০,০০০ পর্যন্তও উঠে যায়। রক্তে জমাট বাঁধছে কি-না সেটি নির্ণয় করার জন্য ডি ডাইমার টেস্টটি করা হয়।


কখন করবেন করোনা পরীক্ষা

ডা. এ.এস.এম জুলফিকার হেলাল
এমবিবিএস, এমডি (নেফ্রোলজি)
কিডনি, মেডিসিন ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক, এএমসিএইচ, ঢাকা
সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
টিএমসিএইচ,বগুড়া
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp