কীভাবে বুঝবেন অ্যালার্জি আছে, প্যানেল টেস্ট কেন জরুরি

নানা কারণে আমাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কখনো এর জন্য দায়ী খাদ্যতালিকা, কখনো বাসস্থান। আবার কখনো পরিবেশের নির্দিষ্ট কিছু উপাদান নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করার ফলেও অ্যালার্জি হতে পারে। কিন্তু সঠিক কারণ জানা না থাকায় অ্যালার্জি নিয়েই জীবন কাটাতে হয় অধিকাংশ মানুষের। এ ক্ষেত্রে প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টির প্রকৃত কারণ ও উপাদানগুলো নির্ণয় করা যায়। আর কারণ নির্ণয় করার পর, অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপদান থেকে সতর্ক থাকলে এবং প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুললে ভালো থাকা যায়।

প্যানেল টেস্ট কেন জরুরি

অ্যালার্জি প্যানেল পরীক্ষার মাধ্যমে পরিবেশের কোন উপাদান কিংবা সুনির্দিষ্ট কোন খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, তা শনাক্ত করা যায়। অ্যালার্জিতে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ জানেন না ঠিক কী কারণে তিনি এমন সমস্যায় ভুগছেন। যদি নির্দিষ্ট কোনো অ্যালার্জেনের প্রতি শরীর সংবেদনশীল হয়, তবে প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে খুব সহজে তা নিরূপণ করা যায়। প্যানেল টেস্টে অ্যালার্জি শনাক্ত করা হলে, সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। নিম্নে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ তুলে ধরা হলো, যা প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।

  • দুধ, ডিম, মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, বেগুন ও টমেটোর মতো কিছু খাবার খেলে অনেকের শরীরে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অ্যালার্জি প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে তারা খুব সহজেই জেনে নিতে পারেন অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাবারের নাম। নির্দিষ্ট সেই খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলে কার্যকরভাবে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
  • পরিবেশে উপস্থিত অ্যালার্জেন নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি দেখা দেয়। বাতাসে উড়ন্ত ধূলিকণা, ঘরের ঝুল, তেলাপোকার বিষ্ঠা, পরাগরেণু, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এবং পোষা প্রাণী যেমন—কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগলের পশম নাকে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি হতে পারে।
  • নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পোকামাকড়ের কামড় এবং সাবান-পারফিউম থেকেও অনেকে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া মানুষভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে সঠিক কারণ ও মাত্রা নির্ণয় করে নিলে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।

কীভাবে বুঝবেন

  • শরীরে বিভিন্ন অংশে চুলকানি হয়, র‍্যাশ ওঠে এবং ফোলাভাব দেখা দেয়।
  • হাঁচি, কাশি, সর্দি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, গলার মধ্যে জ্বালাভাব বা গলা ফুলে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়।
  • চোখ থেকে পানি পড়ে, চোখ জ্বলে, চুলকায়, চোখে অস্বস্তি হয় এবং চোখের আশপাশে ফুলে ওঠে।
  • মুখে-নাকে-গলায় চুলকানি, জ্বর, খাবারের স্বাদ না পাওয়া, মাথা ঘোরা এবং ত্বকে শীতল ঘাম হতে পারে।

কী কী পরীক্ষা করা হয় প্যানেলে টেস্টে

অ্যালার্জি প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জেনের প্রতিক্রিয়া নিরূপণ করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে যে অ্যালার্জেনগুলো পরীক্ষা করা হয়, তা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন—খাবারের অ্যালার্জি, পরিবেশগত অ্যালার্জি, ওষুধের অ্যালার্জি, পোকামাকড়ের বিষের অ্যালার্জি ইত্যাদি।

অ্যালার্জি শনাক্ত করার পদ্ধতিসমূহ

প্রিক টেস্ট : অ্যালার্জি শনাক্তকরণে প্রিক টেস্ট খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি। এতে ত্বকে একটি ছোট্ট ছিদ্র করে তাতে বিভিন্ন অ্যালার্জেনের দ্রবণ প্রয়োগ করা হয়। যদি শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া থাকে, তাহলে ছিদ্রস্থানে লালভাব সৃষ্টি হয়।

ইনট্রাডারমাল টেস্ট : এ পদ্ধতিতে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো ধাপে ধাপে ইনজেকশনের সাহায্যে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করিয়ে শরীরে এর প্রতিক্রিয়া যাচাই করা হয়। এর মাধ্যমে রোগী অ্যালার্জির প্রকৃত কারণ জানতে সক্ষম হন।

ইমুনোগ্লোবিউলিন-ই (আইজি-ই) টেস্ট : অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে একটি অ্যান্টিবডি থাকে, যার নাম ইমুনোগ্লোবিউলিন-ই বা আইজি-ই। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে এর মাত্রা জানা যায়। খাদ্য অ্যালার্জি এবং পরিবেশগত অ্যালার্জি নির্ণয় করতে অত্যন্ত কার্যকর এই পদ্ধতি।

এছাড়াও প্যাচ টেস্ট, ফুড চ্যালেঞ্জ টেস্ট, স্ক্যাচ টেস্ট এবং নাসাল স্মেয়ার টেস্টের মাধ্যমে কার্যকর পদ্ধতিতে অ্যালার্জি শনাক্ত করা যায়।


ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী

ডা. মোঃ কামরুল হাসান চৌধুরী

এমবিবিএস, ডিসিডি, এমএসসি (ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজি)
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন (যুক্তরাজ্য)
চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি, লেজার অ্যান্ড হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন
চেম্বার : ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিকস) কলাবাগান

LinkedIn
Share
WhatsApp