ফাইব্রোস্ক্যান : জেনে নিন লিভারের খবর
অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ
শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ত পদার্থ দূর করে স্বাস্থ্য ভালো রাখে লিভার। কিন্তু কোনো কারণে লিভার নিজেই আক্রান্ত হলে, ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে পুরো শরীরে। অর্থাৎ শারীরিক সুস্থতা অনেকটা লিভারের সুস্থতার ওপরও নির্ভরশীল। তবে, লিভারের রোগগুলো নীরব ঘাতক হওয়ায় অনেকাংশেই লিভার রোগের লক্ষণগুলো শুরুতে টের পাওয়া যায় না। ফলে, দীর্ঘমেয়াদে এগুলো মৃত্যুঝুঁকির কারণ হতে পারে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের কোনো বিকল্প নেই। দেশের শীর্ষ হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নির্ভুল রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

ফাইব্রোস্ক্যান কী
লিভারের নানা ধরনের জটিল রোগ নন-ইনভেসিভ পদ্ধতিতে নির্ণয়ের জন্য যে অত্যাধুনিক মেশিনটি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা হলো ফাইব্রোস্ক্যান মেশিন। এর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভারের গ্রেডিং, লিভার শক্ত হয়ে যাওয়া ও সিরোসিসের প্রাথমিক পর্যায় সুচারুভাবে নির্ণয় করা যায়। পরীক্ষার ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লিভারের জটিল রোগ অতি দ্রুত নিরূপণের পাশাপাশি তার সম্ভাব্য জটিলতা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদান এবং চিকিৎসা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তা মূল্যায়ন করতে পারেন।
কীভাবে করা হয় ফাইব্রোস্ক্যান
ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে রোগীকে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হয়। পরীক্ষার সময় রোগীকে ডান হাত মাথার পেছনে লম্বা করে ছড়িয়ে, বিছানায় পিঠ দিয়ে শুয়ে থাকতে হয়। এ পর্যায়ে দায়িত্বরত ব্যক্তি সেবাপ্রার্থীর পেটের ডান দিকের ওপরের অংশের চামড়ায় জেল জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ করেন। এরপর ফাইব্রোস্ক্যান মেশিনের প্রোব নামক অংশটি নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করে হালকা চাপ দিয়ে প্রোবটিকে নাড়াতে থাকেন। আর নির্দিষ্ট স্থান থেকে ১০টি রিডিং নিয়ে পরে তা সমন্বয় করে চিকিৎসক এই পরীক্ষার ফলাফল নিরূপণ করে থাকেন।
সুবিধাসমূহ
- এই পরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। ফ্যাটি লিভার আছে কি না, কিংবা ফাইব্রোসিস ও সিরোসিস থাকলে, তাও জানা যায়।
- এ পরীক্ষায় সময়ও খুব কম লাগে। মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই লিভারের জটিল রোগসমূহ নির্ণয় করা যায়।
- এ পদ্ধতিতে সূক্ষ্মভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়।
- ফাইব্রোস্ক্যান করতে কাটাছেঁড়া করার প্রয়োজন পড়ে না। খুব সহজেই করা যায়। যারা বায়োপসি করতে ভয় পান, তাদের জন্য এটি খুবই উপযোগী।
- আল্ট্রাসনোগ্রামের মতোই প্রবের সাহায্য এই পরীক্ষা করা হয়। এতে ব্যথা, যন্ত্রণা কিংবা রক্তপাত হয় না।
- সব বয়সীদের জন্য এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। নারী ও পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এ পদ্ধতিতে সেবা পেতে পারেন।
- এ পদ্ধতিতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই। এটি অত্যন্ত নিরাপদ।
- লিভারের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করার পর, ফলোআপের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে পরিবর্তিত অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
কখন করবেন ফাইব্রোস্ক্যান
চিকিৎসকের পরামর্শে ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষা করলে যেসব রোগ নির্ণয় করা যায়, তারমধ্যে রয়েছে—
- অ্যালকোহলিক ও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
- ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস (হেপাটাইটিস বি ও সি)।
- লিভার সিরোসিস।
- হেমোক্রোমাটোসিস।
- উইলসন ডিজিজ ইত্যাদি।
কখন করা যাবে না
- গর্ভাবস্থায় ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষা করাবেন না।
- হার্টে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকলে যেমন— পেসমেকার।
- পেটে পানি জমলে বা অ্যাসাইটিস থাকলে।
ল্যাবএইডে ফাইব্রোস্ক্যান করিয়ে জেনে নিন আপনার লিভারের সুস্থতার খবর
বর্তমানে ল্যাবএইডের প্রধান শাখা ধানমন্ডিসহ সারা দেশের বিভিন্ন শাখায় রোগ নির্ণয়ের অত্যাধুনিক এই সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। এতে খুব সহজে ও নির্ভুল পদ্ধতিতে রোগ নিরূপণ করতে পারছেন তারা। এর ফলে, সঠিক ও কার্যকর চিকিৎসাপ্রাপ্তির মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ
এমবিবিএস, এমডি (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি), এফসিপিএস (মেডিসিন),
এফআরসিপি (এডিন)
অ্যাডভান্সড ট্রেনিং ইন থেরাপিউটিক এন্ডোস্কপি (সাউথ কোরিয়া ও ইন্ডিয়া)
অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিক)