বাড়ছে ভিটামিন ডি ঘাটতিজনিত সমস্যা

আমাদের ত্বক সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু খাবার থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা বজায় রাখা এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, সূর্যালোকে কম থাকার প্রবণতা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে ভিটামিন ডির অভাবজনিত সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভিটামিন ডির অভাবজনিত লক্ষণ

ভিটামিন ডির অভাবে শরীরে নানা ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন—

  • হাড় ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা এবং অল্প বয়সে হাড়ক্ষয়ের সমস্যা।
  • মাংসপেশির দুর্বলতা, ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভব করা।
  • দাঁত দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাওয়া। অতিরিক্ত চুল পড়া।
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বিশেষ করে কপাল ঘামা।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া।
  • ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক ও কালচে হয়ে যাওয়া এবং ব্রণ ওঠা ।
  • ক্ষত বা ঘা শুকাতে দেরি হওয়া।
  • সহজেই যেকোনো ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়া।
  • মানসিক বিষণ্নতা ও উদ্বেগ।

অনেক সময় ভিটামিন ডির ঘাটতি সম্পর্কে সচেতন না থাকার কারণে ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলেও অনেকেই বুঝতে পারেন না কেন সমস্যাগুলো হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট সময় পরপর ভিটামিন ডি পরীক্ষা করা জরুরি।

ভিটামিন ডি পরীক্ষা

ভিটামিন ডির সঠিক মাত্রা নির্ধারণের জন্য ‘ভিটামিন ডি’ পরীক্ষা করা হয়। এটি একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় সুইয়ের মাধ্যমে শিরা থেকে রক্ত নিয়ে ভিটামিন ডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এক্ষেত্রে ভিটামিন ডির পরিমাণ প্রতি লিটার রক্তে ন্যানোমোল এককে মাপা হয়। ভিটামিন ডির স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ৫০ থেকে ১২৫ ন্যানোমোল/লিটার। যদি এই মাত্রা ১২৫ ন্যানোমোল-এর বেশি হয়, তবে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন ডির আধিক্য রয়েছে। অপরদিকে মাত্রা ৩০ ন্যানোমোলের কম হলে তা ভিটামিন ডির ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় ভিটামিন ডির অভাবে ক্লান্তি, হাড়ের সমস্যা, রক্তস্বল্পতা বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা নির্ণয়ে ‘সিবিসি’ পরীক্ষা করা হয়।

ভিটামিন ডির উৎস

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ভিটামিন ডির অন্যতম প্রধান উৎস। আমাদের ত্বকের নিচে ‘সেভেন-ডি হাইড্রোকোলেস্টেরল’ নামক একটি বিশেষ পদার্থ রয়েছে, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এসে ভিটামিন ডি-তে রূপান্তরিত হয়। এজন্য প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সরাসরি সূর্যের আলোতে থাকলে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। ভিটামিন ডি উৎপাদনের জন্য সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার রোদ সবচেয়ে কার্যকর।

দৈনন্দিন বিভিন্ন খাবার থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে—

  • ডিম
  • দুধ
  • দই
  • পনির
  • তেলসমৃদ্ধ মাছ
  • ওটমিল
  • মাশরুম

ভিটামিন ডির ঘাটতিজনিত জটিলতা

বর্তমানে ভিটামিন ডির ঘাটতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। ভিটামিন ডির অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে অস্টিওপোরোসিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, ডিমেনসিয়া ও আলঝেইমার রোগেরও কারণ হতে পারে ভিটামিন ডির ঘাটতি। ভিটামিন ডির অভাবে বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া নামক একধরনের রোগ হয়। এই রোগে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ক্ষয় হয়ে যায়। কখনো কখনো কোমর ও মেরুদণ্ডে বাতের ব্যথার মতো ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় মেরুদণ্ড বেঁকে যায়।

ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে করণীয়

শরীর সুস্থ রাখতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকা জরুরি। এজন্য প্রতিদিন কিছু সময় সূর্যের আলোতে থাকুন এবং ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার খান। নির্দিষ্ট সময় পরপর ভিটামিন ডির মাত্রা পরীক্ষা করুন। অতিরিক্ত ভিটামিন ডির ঘাটতিতে ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি-২ ও ডি-৩ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ‘ল্যাবকাল ডি’ একটি ভিটামিন ডি-৩ ও ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট, যা ভিটামিন ডির ঘাটতি দূর করতে এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ কিডনির সমস্যা ও শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তাই পরীক্ষা ছাড়া বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ না করাই ভালো।


অধ্যাপক ডা. সমীরণ কুমার সাহা

অধ্যাপক ডা. সমীরণ কুমার সাহা

এমবিবিএস, পিএইচডি (মেডিসিন)
এফএসিপি, এফআরসিপি (এডিন)
অনারারি প্রফেসর, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ
চেম্বার : ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp