লিভার সুস্থ রাখে যেসব খাবার

লিভার সুস্থ রাখে যেসব খাবার

কামরুন আহমেদ

মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র একটু জটিল তন্ত্র, যা হতে খাদ্যের ও দেহের অভ্যন্তরে এর পরিশোষণ ত্বরান্বিত হয়। এর সাথে জড়িত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। যেমন পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, যকৃৎ, পিত্তথলি, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র কোনো অসুখে গোটা পরিপাক ও পরিশোষণ ব্যাহত হয় এবং স্বাস্হ্যহানির আশঙ্কা থাকে। গ্যাস্ট্রোলিভার ডিজঅর্ডার বলতে আমরা বুঝি গ্যাস্ট্রোলজি এবং লিভারের রোগসমূহ। লিভার আমাদের দেহের একটি বড় আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যকৃতের কাজ হলো কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন মেটাবোলিজম, ডিটক্সিফিকেশন, আয়রন ও ভিটামিন সঞ্চয়।

গ্যাস্ট্রোডিজিস বলতে আমরা বুঝি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিজিজ এবং লিভার ডিজিজেস। প্রতিরোধমূলক যত্ন হলো গাস্ট্রোলজির একটি ভিত্তি। এতে করে লিভার এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেম ভালো থাকে, যার লক্ষ্য হচ্ছে সম্ভাব্য সমস্যাগুলো বৃদ্ধির আগে চিহ্নিত করা এবং সমাধান করা।গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে প্রতিরোধমূলক যত্নের মধ্যে রয়েছে— ডায়েট, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন, নির্দিষ্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্রাক্টের যত্নের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ বিকাশের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে লিভারের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

গ্যাস্ট্রোলিভারের ডিজিজ হতে পারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থায় আমাদেরকে ডায়েটের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। যারা লিভার এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিজিজে ভুগছেন তাদের খাবার নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে ডায়েটারি গাইডলাইন এমন হতে হবে যেন রোগীকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

গ্যাস্ট্রোলিভারের কয়েকটি রোগের কথা উল্লেখ করা হলো—

  • বদহজম (ডিসপেপসিয়া)।
  • পেপটিক আলসার।
  • সেলিয়াক ডিজিজ।
  • আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম)।
  • ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স।
  • ডায়রিয়া।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • আইবিডি (ইনফ্লাম্যাটোরি বাওয়েল ডিজিজ)।

লিভারের কয়েকটি রোগ হলো—

  • ফ্যাটি লিভার।
  • লিভার সিরোসিস।
  • জন্ডিস।
  • ভাইরাসজনিত সংক্রমণ।

ফ্যাটি লিভার

লিভারে যখন অতিরিক্ত চর্বি ট্রাইগ্লিসারাইড আকারে জমা হয় তখন আমরা তাকে ফ্যাটি লিভার বলি। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। আমরা যখন অতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করি তখন তা চর্বি আকারে লিভারে জমা হয়। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য শর্করাজাতীয় খাবার। আমরা যখন খাবার খাই তখন ভাত, রুটি, নুডলস, বিস্কুট, ওটস—এসব কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি করে খেয়ে ফেলি। এসব খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। কারণ ফ্যাটি লিভার থেকে লিভারজনিত অন্য রোগের সূত্রপাত হয়। যা পরবর্তীকালে লিভার ফেইলিওরের দিকে নিয়ে যায়।

ডায়েটের ভূমিকা

বিশ্বজুড়ে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কিছু নির্দেশিকা পালন করা হয়। যেমন—৬ মাসে দেহের অন্তত ১০% ফ্যাট কমিয়ে ফেলতে হবে। দৈনিক মোট ক্যালরি থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। মানবদেহের মোট খাদ্যচাহিদার অন্তত ১০ থেকে ২০ শতাংশ শক্তি চর্বি থেকে নিতে হবে। যাদের মধ্যে মনো আনস্যাচুরেট ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকবে। ট্রান্সফ্যাট পরিহার করতে হবে।

লিভার সিরোসিস

লিভারের সেলগুলো যদি শক্ত চাকার মতো হয়ে যায় এবং এর স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারায় তাকে লিভার সিরোসিস বলে। সাধারণত ভাইরাল ইনজেশন এবং মদ্যপান— এই দুই কারণে লিভার সিরোসিস হয়। এ সময় হাই ক্যালোরি, হাই কার্বোহাইড্রেট, অ্যালবুমিন, সরল চেইন ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে এবং ভিটামিন মিনারেল সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে।

জন্ডিস

জন্ডিস হলো লিভারের অস্বাভাবিক অবস্থার প্রকাশিত লক্ষণ। লিভার ও পিত্তনালির স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হলে যেই সব লক্ষণ প্রকাশ পায় তার মধ্যে জন্ডিস অন্যতম। এই সময় তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করতে হয়। সহজে হজমযোগ্য খাবার খেতে হয়। আর বেশি করে পানি খেতে হবে।

গ্যাস্ট্রোলিভার রোগীদের খাদ্য

এমন খাবার খেতে হবে যা সহজে হজমযোগ্য, পুষ্টিকর ও সুষম। সেই সঙ্গে বিশ্রাম নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। যেসব খাবার গ্রহণ করতে হবে তা হলো—

  • প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট রাখা।
  • সব ধরনের শাকসবজি ও ফল-ফলাদি খাওয়া।
  • খাদ্য নির্বাচন এমন হতে হবে যেন রান্নার পদ্ধতি ও পরিবেশন সহজ হয়।
  • রান্নাতে কম তেল ও কম মসলা ব্যবহার করা।
  • বাসায় তৈরি খাবার খেতে হবে।
  • কার্বনেটজাতীয় খাবার নিষেধ।
  • নরম ভাত, রুটি (গ্লুটেনমুক্ত) চিড়া-মুড়ি, বার্লি, সাগু, ওটস, টক দই, পনির, মুরগির মাংস, মাছের মধ্যে টেংরা, পাবদা রুই, কাতল, ছোট মাছ ইত্যাদি।
  • সবজি (আলু, মিষ্টি আলু, পটোল, পেঁপে, লাউ, ধুন্দল)
  • ডিমের সাদা অংশ।
  • পরিমিত রান্নার তেল ও মসলা।

যা খাবেন না

আইসক্রিম, ড্রাই ফ্রুটস, বাদাম, সালাদ, কফি, দুধ চা, ঘি ডালডা, তেলে ভাজা খাবার, শুঁটকি মাছ, সোডিয়ামযুক্ত খাবার, চানাচুর ও ডাল।


কামরুন আহমেদ

কামরুন আহমেদ
সিনিয়র পুষ্টিবিদ
ল্যাবএইড হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp