অফিসে কাজ অফিসেই গতি!

অফিসে কাজ অফিসেই গতি!

ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

অফিসে ঢোকার পরে ফাইলে মুখ গুঁজে, কম্পিউটারে কি-বোর্ড চেপে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়! খাওয়ার জন্য খানিকটা বিরতি। আবার কাজ। একসময় দেখা যায়, কাঁধের মাংসপেশিগুলোতে ব্যথা শুরু হয়েছে। হাতও যেন আর নড়তে চাইছে না। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখও ব্যথা করে কখনো কখনো। শরীরজুড়ে আসে ক্লান্তি…

পূর্ণোদ্যমে আর শক্তিতে অফিসের সময়টা পার করতে চাইলে মানতে হবে কিছু নিয়মকানুন। সারা দিন একটানা কাজ না করে একটু বিরতি নিন। এ সময় শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো জাগিয়ে তুলতে হবে নতুন করে। এভাবে একটানা চার ঘণ্টা কাজ করা যাবে। পনের থেকে বিশ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার পূর্ণোদ্যমে কাজ করতে পারবেন টানা দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এভাবে কাজ করলে শরীর যেমন ভালো থাকবে তেমনি কাজেও আসবে গতি।

কীভাবে বসবেন চেয়ারে : কম্পিউটারে বসার ভঙ্গির ওপর অনেকটাই নির্ভর করে সারা দিনের সুস্থ থাকাটা। কম্পিউটারের সামনে বসতে হবে মেরুদন্ড সোজা করে। আর চোখ বরাবর হতে হবে কম্পিউটার মনিটর। মনিটর থেকে বসার দূরত্ব হবে নিজের হাতের পুরো এক হাত। খুব হিসাব করে বললে ১৮ থেকে ২৪ ইঞ্চির দূরত্ব হবে এটি। আর পায়ের পাতা থাকবে মেঝের সঙ্গে সমান করে। এভাবে বসতে হবে ঠিকই। কিন্তু বিরতি নিতে ভুলবেন না। একটানা কাজ না করে অফিসে বসেই করতে পারেন কিছু ব্যায়াম। ব্যায়ামগুলো কীভাবে করবেন তা নিচে দেখুন।

হাত : কর্মক্ষেত্রে সারাক্ষণই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকছে হাত। হাতের ক্লান্তি দূর করতে হাত দুটো ছড়িয়ে দিন  দেহের দুই পাশে। কনুই আর কবজি ভাঁজ করুন কয়েকবার। এবার হাত দুটি ফিরিয়ে নিয়ে যান আগের কাজে।

পা : বসে যাঁদের কাজ করতে হয়, তাঁদের অনেকক্ষণ পায়ের কোনো কাজ থাকে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পা দুটি নিস্তেজ  থেকে পায়ের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে আসে। রক্ত চলাচলও হয় না ঠিকমতো। তাই পা দুটিকে কর্মক্ষম রাখতে সেলাই মেশিন যেভাবে চালানো হয়, পায়ের পাতা সঞ্চালন করুন সেভাবে।

কোমর : দুই হাত কোমরে রেখে আস্তে ধীরে পেছনে বাঁকা হন। মনে রাখবেন, সামনে ঝুঁকবেন না কখনোই।

ঘাড় : টানা কাজ করে গেলে ঘাড়ের মাংসপেশী, কশেরুকার সন্ধিগুলোর টিস্যু আসাড় হয়ে আসে। প্রতি ২০ মিনিট পরে ঘাড়ের মাংসপেশিগুলো স্ট্রেচিং করে আবার ফিরে যান কাজে।

যাঁরা অনেকক্ষণ একটানা বসে কাজ করেন, তাঁদের সঠিক নিয়মে বসা শিখতে হবে। পায়ের পাতা, হাঁটু, কোমর ৯০ ডিগ্রি কোণে রাখতে হবে। দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে না থেকে হেঁটে বেড়ান একটু।

সঙ্গে জেনে নিন কিছু টিপস

  • ভঙ্গিগত ত্র“টি যতটা সম্ভব এড়িয়ে বসে কাজ করুন।
  • লেখালেখির কাজে কাঠের সমান চেয়ারই সবচেয়ে ভালো।
  • যতটা সম্ভব টেবিলের কাছে বসতে হবে।
  • কোনো দিকে ঝুঁকে না বসে মেরুদন্ড সোজা করে বসতে হবে।
  • ল্যাপটপটি টেবিলের মাঝে রেখে কাজ করুন, যাতে দুই হাত ঝুলে না থাকে।
  • কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সরাসরি সামনের দিকে তাকিয়ে কাজ করুন ।
  • খুব ছোট হরফে লিখবেন না, এতে ঘাড়ের ছোট ছোট মাংসপেশি শক্ত হয়ে আসে।
  • কাজের ফাঁকে ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য উঠে দাঁড়ান।

ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

ব্যবস্থাপক, মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্স
ল্যাবএইড হাসপাতাল।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp