ইআরসিপির যতকথা
ডাঃ মোঃ শাহেদ আশরাফ
ইআরসিপি (ইআরসিপি) একটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি যা দুটি বিশেষ কাজকে সমন্বয় সাধন করে থাকে। প্রথম কাজ হল পরিপাকতন্ত্রের উপরিভাগ যথা ইসোফেগাস, পাকস্থলি, ডিওডেনাম ক্যামেরার সাহায্যে সচক্ষে অবলোকন করা এবং এক্সরের মাধ্যমে সাধারণ পিত্তনালি ও অগ্নাশয়নালীর রোগসমূহ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা। ইআরসিপি সম্পর্কে দক্ষ হয়ে উঠতে হলে শরীর বিদ্যার তত্ত্বীয় জ্ঞানের প্রয়োজন হয় অর্থাৎ লিভার, পিত্তথলী, পিত্তনালী, অগ্নাশয়, অগ্নাশয়নালী, ক্ষুদ্রান্ত (ডিওডেনাম) এর সম্পর্ক এবং অবস্থান পরিষ্কার হওয়া দরকার।

যকৃত পিত্তরস তৈরি করে। এই যকৃত থেকে ডান যকৃত নালি (Right Hepatic Duct) ও বামযকৃত নালি (Left Hepatic Duct) বের হয়। উক্ত নালি দুটি কিছু দূর যাবার পর একত্রিত হয়ে সাধারণ যকৃত নালি (Common Hepatic Duct) তৈরি করে। এ দিকে পিত্তথলি থেকে একটি নালি বের হয়ে সাধারণ যকৃতনালির সাথে যুক্ত হয়ে সাধারণ পিত্ত নালিতে (Common Bile Duct) পরিনত হয়।
লিভার থেকে তৈরিকৃত পিত্তরস সাধারণ যকৃত নালি হয়ে পিত্তথলিতে অবস্থান করে এবং আরও ঘনত্ব প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে অগ্নাশয় থেকে প্রধান অগ্নাশয়নালি (MPD) বের হয়ে আসে। উক্ত প্রধান অগ্নাশয় নালি এবং সাধারণ পিত্তনালিত ক্ষুদ্রান্ত্র (ডিওডেনাম) এর দ্বিতীয় অংশে প্রবেশ করে এবং একত্রিত হয়। শরীর খাদ্য গ্রহণ করার পর বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার ফলে পিত্ত থলি থেকে ঘন পিত্ত সাধারণ পিত্তনালী দিয়ে ডিওডেনাম এর দ্বিতীয় পর্বে এসে উন্মুক্ত হয় এবং চর্বি জাতীয় খাবার পরিপাক করে। অগ্নাশয় থেকে তৈরি হওয়া বিভিন্ন এনজাইম প্রধান অগ্নাশয় নালি দিয়ে ডিওডেনাম এর দ্বিতীয় অংশে উন্মুক্ত হয়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার পরিপাক করে।
উলেখ্য যে ইআরসিপি তখনই ব্যবহার করা হয় যখন রোগীর পিত্ত ও অগ্নাশয় নালি সঙ্কুচিত হয় বা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ইআরসিপি পূর্বে রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ইআরসিপির প্রধান কার্যকারিতা
রোগ নির্ণয় মূলক
- পিত্তপাথর
- পিত্তনালির টিউমার
- পিত্তনালির আঘাত
চিকিৎসা মূলক
- পিত্তনালির পাথর অপারেশন
- নিরাময়মূলক স্টেন্ট প্রয়োগ
- সঙ্কুচিত পিত্তনালি ও অগ্নাশয়নালি প্রসারিত করা।
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রেই ইআরসিপি করা হয় না
- সদ্য অগ্নাশয় সংক্রমণ (Acute Pancreatitis)
- রক্ত জমাটজনিত অসুস্থতা (Coagulation Disorder)
- সদ্য হার্ট এ্যাটাক
- রঞ্জক প্রতিক্রিয়াশীলতা
- দুর্বল স্বাস্থ্য
- তীব্র হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসজনিত রোগ।
ইআরসিপি এর ঝুঁকি
- ইআরসিপির প্রধান ঝুঁকি হল তীব্র অগ্নাশয় সংক্রমণ (Acute Pancreatitis)।
- যে কোন প্রকার সংক্রমণ (Infection)
- এলার্জিক প্রতিক্রিয়াশীলতা (রঞ্জক)
- অধিক রক্তপাত
- পরিপাকতন্ত্রের ছিদ্রকরণ (Perforation)।
শেষ কথা
ইআরসিপি একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা না থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করে। এছাড়া অপারেশনে ঝুঁকি ও খরচ বেশি থাকায় ইআরসিপি অপারেশন থেকে শ্রেষ্ঠতর ।

ইআরসিপি এর পদ্ধতি
- রোগীকে অজ্ঞান করা হয় অথবা ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়।
- Endoscope (ক্যামেরা) মুখ গহ্বর দিয়ে ইসোফেগাস, পাকস্থলি হয়ে ডিওডেনাম এর দ্বিতীয় পর্ব পর্যন্ত প্রবেশ করানো হয়।
- ডিওডেনাম এর দ্বিতীয় পর্ব সাধারণ পিত্তনালি এবং অগ্নাশয়নালির সংযোগস্থল তথা Ampulla of Vater এ দৃশমান হয়। Ampulla of Vater দিয়ে একটি প্লাস্টিক ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং তেজস্ক্রিয় রঞ্জক প্রয়োগ করা হয়। এক্সরের মাধ্যমে সাধারণ পিত্তনালি এবং প্রধান অগ্নাশয়নালি দৃশ্যমান করে পাথর বা টিউমার বা অন্য কোন বাঁধা নির্ণয় করা যায়।
- অনেক সময় Ampulla of Vater এর প্রবেশ মুখ স্বল্প বিদ্যুতায়িত তার দিয়ে কেটে বড় করা হয় এবং প্রয়োজনে পিত্তনালি পাথর অপসারণ করা হয় বা টিউমার থেকে টিস্যু কেটে এনে পরীক্ষা করা হয়।
- তাছাড়া সাধারণ পিত্তনালিতে পাথর থাকলে বাস্কেট বা বেলুন এর মাধ্যমে অপসারণ করা হয় এবং রোধকৃত বিলিরুবিন নিষ্কাশন করা হয়।
- অগ্নাশয় এর দীর্ঘ মেয়াদি সংক্রমণ (Chronic Pancreatitis) নির্ণয় করার জন্য ক্যামেরার মাধ্যমে প্রধান অগ্নাশয়নালি অবলোকন করা হয়।

ডাঃ মোঃ শাহেদ আশরাফ
এমবিবিএস (সিইউ), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমডি হেপাটোলজি/লিভার রোগ (বিএসএমএমইউ)
মেডিসিন, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।