অধ্যাপক ডা. সাহাদত হোসেন সেখ
ক্যানসার হচ্ছে ঘাতক ব্যাধি। একটা সময় ক্যানসার শব্দটি শুনলেই সবাই ভয় পেত। এ রোগের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চললেও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে ক্যানসার এখন নিরাময়যোগ্য। অনেক রকমের ক্যানসারের মধ্যে কলোরেক্টাল ক্যানসার অন্যতম। কলোরেক্টাল ক্যানসার বলতে বোঝায় কোলনের (বৃহদন্ত্রের মূল অংশ) ক্যানসার অথবা রেক্টাম (বৃহদন্ত্রের শেষ ১৫ সেমি) এর ক্যানসার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে শুধু ২০২০ সালেই কলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫২৪৩ জন।
ঝুঁকিতে কারা
কলোরেক্টাল ক্যানসার যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে ৫০ অথবা তদূর্ধ্ব বয়সের লোকদের এই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অবশ্য বাংলাদেশে প্রায়শ অনেক অল্প বয়সেই এই ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী আমরা দেখে থাকি।
কলোরেক্টাল ক্যানসারের কারণ
এর কারণগুলোর মধ্যে পারিবারিক ক্যানসারের ইতিহাস অন্যতম। আগে থেকে কোলন বা রেক্টামে পলিপ হয়ে থাকলে সেটি পরবর্তীকালে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার বা কম আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে, মদ্যপান বা ধূমপান করলে ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। অন্ত্রের কিছু রোগ যেমন- কলোরেক্টাল মলাশয়ে ক্যানসারের কারণ দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও আইবিডি (ওইউ) থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

কলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ
এই ক্যানসারের লক্ষণগুলো হলো, পায়ুপথ বা মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, তলপেটে ব্যথা বা অস্বস্তি, শারীরিক দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে চাকা অনুভ‚ত হওয়া, রক্তশূন্যতা এবং মলত্যাগের পর পেট পুরোপুরি খালি হয়নি এমন বোধ হওয়া।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
কলোরেক্টাল ক্যানসার নির্ণয়ে বেশকিছু পরীক্ষা হয়। তার মধ্যে একটি কলোনোস্কপি। এতে কোনো ক্ষত বা টিউমার পাওয়া গেলে বায়োপসি করা হয়। এছাড়া আরো কিছু পরীক্ষা যেমন- এফওবিটি (ঋঙইঞ) বা ডাবল কনট্রাস্ট বেরিয়াম এনেমা করা হয়। রোগটি কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ণয় করার জন্য এমআরআই (গজও) ও সিটি স্ক্যান (ঈঞ ঝপধহ) সহ রক্তের কিছু পরীক্ষা করা হয়।
কলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসা
এর চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যানসারটি কোন পর্যায়ে (ঝঃধমব) আছে তার ওপর। শুরুতে ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব। সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি; এর যেকোনোটি অথবা এর কয়েকটি পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে সার্জারি হচ্ছে অন্যতম প্রধান চিকিৎসা। বাংলাদেশে ল্যাপারোস্কপিক কলোরেক্টাল সার্জারি অনেক উন্নতি লাভ করেছে। বর্তমানে ল্যাবএইড হাসপাতালে কলোরেক্টাল ক্যানসারের ল্যাপারোস্কপিক সার্জারিসহ সবধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
কলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন জরুরি। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবার যেমন- টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল রাখতে হবে। অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য ও লালমাংস যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস পরিহার করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত শরীরচর্চা ও কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ও ধূমপান পরিহার করতে হবে। বংশে এই ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী থাকলে সকল সদস্যকে স্ক্রিনিং করাতে হবে।

অধ্যাপক ডা. সাহাদত হোসেন সেখ
এফসিপিএস, এমআরসিএস (এডিন), এফআরসিএস (গ্লাসগো) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
অ্যাডভান্সড ল্যাপারোস্কোপিক কোলোরেক্টাল সার্জন
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল