দ্রুত এবং নির্ভুল অপারেশনে রোবোটিক সার্জারি

আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মৃত্যুবরণ করে এক লাখেরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক রোগীর তুলনায় চিকিৎসাব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার। এমনই একটি পদ্ধতি হচ্ছে ‘রোবোটিক সার্জারি’।

রোবোটিক সার্জারি কী?

পেটের ভেতর ছোটো ছিদ্র করে সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতি ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট শল্যচিকিৎসা হলো ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি। এটি আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটি রোবটের সঙ্গে এ সমস্ত ল্যাপারোস্কপিক যুক্ত করলেই রোবটিক সার্জিক্যাল সিস্টেম তৈরি হয়। এই পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে প্রচলিত ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতির দুর্বলতাগুলো অনেক হ্রাস পেয়েছে।

রোবোটিক সার্জারির অর্থ এই নয় যে অপারেশনটি কোনো রোবট করছে। বরং এ ধরনের অপারেশনে এমন কিছু রোবোটিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় যা চিকিৎসকের নির্দেশনানুযায়ী কাজ করে থাকে। যেমন- প্রোস্টেট ক্যানসারের অপারেশনের ক্ষেত্রে ক্যানসার আক্রান্ত প্রোস্টেট ও তার আশেপাশের কোষগুলো বের করা বেশ জটিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসক খুব সহজেই কাজটি করতে পারেন। কেননা রোবোটিক আর্ম বা রোবোটের হাত ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরতে পারে।

কীভাবে করা হয়?

রোবোটিক সার্জারিতে ব্যবহৃত রোবোটিক আর্মগুলোর একটিতে থাকে ল্যাপারস্কোপ এবং অন্যটিতে থাকে সার্জারিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি। এগুলো সাধারণ যন্ত্রপাতির তুলনায় অত্যন্ত ছোটো হয়ে থাকে। এসময় চিকিৎসক একটি কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে টিউমারটির ত্রি-মাত্রিক ছবি দেখে একটি জয়স্টিকের মাধ্যমে রোবোটিক আর্মগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন এবং সেগুলি চিকিৎসকের নির্দেশনা মতো কাজ করে ।

রোবোটিক সার্জারির সুবিধা

  • রোবোটিক পদ্ধতি অন্যান্য প্রথাগত পদ্ধতির চেয়ে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে অপারেশন সম্পন্ন করতে সক্ষম।
  • শরীরের যে অংশগুলোতে চিকিৎসকের হাত পৌঁছুনো অসম্ভব সেই জায়গাগুলোতে খুব সহজে রোবোটিক আর্ম পৌঁছুতে পারে এবং ক্যানসার আক্রান্ত কোষটি নিরাপদে বের করে আনতে পারে।
  • প্রোস্টেট, কিডনি, ফুসফুস বা জরায়ুর জটিল অপারেশনগুলো রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে খুব সহজেই করা যায়।
  • রোগীর সুস্থ হতে অনেক কম সময় লাগে।
  • এ পদ্ধতিতে খুব অল্প অংশ কাটার প্রয়োজন হয়। তাই রোগীর শারীরিক যন্ত্রণা যেমন কম হয় তেমনি রক্তপাতও কম হয়।
  • যেহেতু এ পদ্ধতিতে রোগীর সুস্থ হতে কম সময় লাগে তাই খুব বেশিদিন হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না। এতে চিকিৎসা খরচ বেশ কমে যায়।

কার্যকারিতা

রোবোটিক সার্জারি কতটা কার্যকর হবে সেটি নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, শরীরের কোন অংশে অস্ত্রোপচার হবে, রোগীর পূর্ব ইতিহাস এবং চিকিৎসকের দক্ষতার ওপর। সবধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোবোটিক সার্জারি কার্যকর নাও হতে পারে। তাই ঠিক কোন ক্ষেত্রে রোবোটিক সার্জারি প্রয়োজন, আর কখন প্রয়োজন নয় সেটি জানা আবশ্যক। যদি কারো রোবোটিক সার্জারির প্রয়োজন হয় তবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি-

  • এ পদ্ধতি সম্পর্কে চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
  • অপারেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন। এ বিষয়ে চিকিৎসককে প্রশ্ন করতে পারেন।
  • এ পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ কাজ করলে সেটি চিকিৎসককে জানান। এক্ষেত্রে চিকিৎসক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারেন।


অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম
এমবিবিএস, এফসিপিএস, এফআইসিএস
প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক, ইউরো-অনকোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইউরো-অনকোলজি
ল্যাবএইড ক্যানসার হসপিটাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp