পরোক্ষ ধূমপানে শিশুদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি
ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার
এই তো সেদিন রাস্তায় দেখছিলাম হাসিখুশি একটি পরিবার রিকশায় করে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী আর তাঁদের শিশুসন্তান। বাবা এক হাতে আগলে রেখেছেন তাঁর শিশুটিকে। অন্য হাতে সিগারেট। হাসি-গল্পের বিরতিতে কায়দা করে টান দিচ্ছেন সিগারেটে। একটু পরপর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে শিশুটি আর তার মায়ের চারপাশ। বাবা এক হাতে যেমন শিশুটিকে আগলে রাখতে চাইলেন, ঠিক অন্য হাতে তাঁর অজান্তেই শিশুটির ক্ষতি করে চলছেন। কেমন করে?
![](https://shukheoshukhe.com/wp-content/uploads/2024/06/17-A-1024x683.jpg)
সিগারেটের ছেড়ে দেওয়া ধোঁয়ায় পরোক্ষ ধূমপানের কবলে পড়ছে শিশু। সিগারেটের ধোঁয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদেরই। কারণ, তাদের ফুসফুস পরিণত হয়নি এখনো। তাই শিশুর জন্য সিগারেটের ধোঁয়া বড় হুমকির। আর শিশুর ফুসফুসটি ছোট্ট হলেও পরিণত ফুসফুসের চেয়ে অনেক বেশিবার বাতাস টেনে নেয়। তাই বাতাসের সঙ্গে ক্ষতিকর ধোঁয়াটাও শিশু ফুসফুসে ভরে ফেলে দ্রুত। সিগারেটের ধোঁয়া ফুসফুসে বাসা বেঁধে কী কী ক্ষতি করতে পারে, আসুন তা-ও জেনে নেওয়া যাক।
- পরোক্ষ ধূমপানে শিশুর ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুব বেশি।
- শুনতে অবাক লাগলেও শিশুর কানে সংক্রমণ হতে পারে পরোক্ষ ধূমপানে।
- শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারে কখনো কখনো।
- পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে দীর্ঘদিন কাশি থাকতে পারে।
- শিশুর অ্যাজমার জন্যও দায়ী পরোক্ষ ধূমপান।
- গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি ঝরারও কারণ এটি।
- সেই সঙ্গে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে ফেলে, শিশুর স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটায় পরোক্ষ ধূমপান।
- এই পরোক্ষ ধূমপান শিশুর মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
- সেই সঙ্গে শিশুর ছোট্ট হৃৎপিণ্ডটিরও ক্ষতি করে পরোক্ষ ধূমপান।
পরোক্ষ ধূমপানে হৃদ্রোগের ঝুঁকি
শৈশব, বয়ঃসন্ধিকালে পরোক্ষ ধূমপান হৃদ্ যন্ত্রের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপান অধূমপায়ীর কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। পরোক্ষ ধূমপানের
কারণে—
- ধমনিতে রক্ত জমাট বেঁধে থ্রম্বোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
- ধমনির কোষে যে আবরণ থাকে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- ধমনির সংকোচন ও প্রসারণ অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
- হৃৎপেশির শক্তি উৎপাদনক্ষমতা কমে যায়।
- কমে যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।
- এ ছাড়া বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
আপাতদৃষ্টিতে সিগারেটের ছেড়ে দেওয়া ধোঁয়া নির্দোষ দর্শন হলেও এই ধোঁয়ায় মিশে থাকে হাজারো ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ। এই ধোঁয়া সব বয়সী, সব মানুষেরই ক্ষতি করে। এর মধ্যে শিশু এবং বয়োবৃদ্ধদের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাসের হার থাকে দ্রুত। তাই পরোক্ষ ধূমপানে শিশুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এ ছাড়া যাঁরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই পরোক্ষ ধূমপান হৃদ্রোগের হারও বাড়িয়ে দেয়।
![](https://shukheoshukhe.com/wp-content/uploads/2024/06/17-B-1024x816.jpg)
জেনে-বুঝে অন্যের ক্ষতির কারণ কে হতে চায়? যিনি সিগারেট খান তিনি নিজের যেমন ক্ষতি করছেন, তেমনি ক্ষতি করে চলছেন পাশের মানুষ কিংবা প্রিয়জনের। তাই সিগারেটকে ‘না’ বলুন।
![ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার](https://shukheoshukhe.com/wp-content/uploads/2022/02/Dr-shidd..jpg)
ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার
ব্যবস্থাপক,
মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স
ল্যাবএইড হাসপাতাল