পিত্তথলির, থলের কথা

পিত্তথলির, থলের কথা

ডাঃ মোঃ সায়েফউল্লাহ

কথিত আছে, সার্জনদের ব্রেড এন্ড বাটার হচ্ছে পিত্তথলি। প্রতিদিনের অপারেশন তালিকার শুরুতে পিত্তথলিতে অপারেশন এক বা একাধিক থাকবেই। পিত্তরসের ধরন, বিভিন্ন জীবানু  সংক্রমন, চর্বিযুক্ত খাবার ও রক্ত কোষ ভেঙে যাওয়ার কারণে সাধারণত পিত্তথলিতে পাথর হয়।

পিত্তথলির সর্বাধিক রোগগুলো কি?

পিত্ত পাথর, পিত্ত ক্যানসার, পিত্ত সংক্রমন (পাথর দিয়ে অথবা পাথর বিহীন) এছাড়া পিত্ত পাথরের বিভিন্ন জটিলতা সমূহ।

কখন অপারেশন লাগবে?

মূলত উল্লেখ্য কারণেই পিত্তথলি ফেলে দিতে হয়, কিংবা অপারেশনের প্রয়োজন পরে।

অপারেশনে ক্ষতি হবে কি?

স্বাভাবিক জীবনযাপনে পিত্তথলি না থাকলে কোন সমস্যা হয় না।

অপারেশনের পর কোন ধরণের খাবার নিষিদ্ধ?

পিত্তরস লিভার থেকে তৈরি হয় এবং পিত্তনালী দিয়ে খাদ্যনালীতে খাবারের সংস্পর্শে আসে। তাই পিত্তথলি না থাকলেও কোন খাবারেই সমস্যা হয় না।

অপারেশনের উপযুক্ত সময় ও প্রক্রিয়া কি?

তীব্র প্রদাহ যদি ৩ দিনের অধিক হয় তবে সাময়িক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ৬ সপ্তাহ পর অপারেশন করা উত্তম। সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে পেট ফুটো করে (লেপারোস্কপি, কোলেসিস্টেকটোমি) ভর্তির দিনই অপারেশন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী বাড়ি চলে যেতে পারেন। অপারেশনের ৬ ঘণ্টা পর থেকে মুখে খাবার এবং হাঁটা চলা করা যায় এবং দৈনন্দিন সাধারণ কাজকর্ম করা যায় বলেই এটি পিত্তথলির উত্তম অপারেশন পদ্ধতি।

অপারেশনের প্রয়োজন কতটা?

কখনও ব্যথা হয়নি। অন্য কারণে পরীক্ষায় পাথর ধরা পড়লে, পিত্তথলির পাথর খুব বড় হলে, স্বল্প বয়সী ডায়াবেটিস রোগী হলে, অনেকগুলো ছোট পাথর থাকলে- অপারেশন করাই উত্তম অন্যথায় যে কোন জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন- জন্ডিস হওয়া, অগ্নাশয়ের প্রদাহ অথবা পিত্তথলির ক্যানসার।

অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীকে অপারেশন করা যায় কি?

অপারেশনে সাবধানতা অবলম্বন করে অপারেশন করে, বিভিন্ন রোগের মাত্রাকে সহনশীল পর্যায়ে এনে অপারেশন করলে কোন সমস্যা হয় না।

রোগের লক্ষণগুলো কি কি?

পেটের ডানদিকের উপরিভাগে ব্যথা, পিঠের দিকে ডান পাশে ব্যাথা। সময়ে সময়ে ব্যথা ডান কাঁধে উপলদ্ধি করা, পেট ফাঁপা, চর্বি জাতীয় খাবারে অস্বস্তি অনুভব হওয়া, জন্ডিস, জ্বর, বমিভাব, বমি হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দেয়। অনেক সময় পিত্তক্যানসার শুধুমাত্র জন্ডিস ও উল্লেখ্য  লক্ষণগুলো মৃদু আকারেও দেখা যায়। মনে রাখতে হবে পিত্তথলির ক্যানসার যখন ধরা পড়ে তখন অনেকাংশেই চিকিৎসার পরিধিকে ছাড়িয়ে যায় এবং কোনভাবেই ৬ মাসের অধিক রোগী বেঁচে থাকে না। তাই পিত্তথলির সমস্যায় সাবধানতার সাথে সুচিন্তিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লেপারোসকপি করতে অসুবিধা হলে পেট কেটেই অপারেশন করতে হয়। অভিজ্ঞতার অভাব থাকলে পিত্তনালির ইনজুরিসহ নানাবিধ জটিলতাসহ তখন জীবন সংকটাপন্নও হয়ে উঠতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা নিন।


ডা. মো. সায়েফউল্লাহ

ডা. মো. সায়েফউল্লাহ

এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারি)
সহকারী অধ্যাপক
স্যার সলিমুলাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল জেনারেল, লেপারোস্কোপিক, কলোরেকটাল ও
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সার্জন
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp