ফাইব্রোস্ক্যান ও লিভার
ডাঃ একে, এম, সামসুল কবীর
ফাইব্রোস্ক্যান কি?
মানবদেহে বিভিন্ন বিপাকীয় কর্মকাণ্ডের জন্য লিভার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর লিভারের বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ এবং তার সম্ভাব্য পরিণতি নন-ইনভেসিভ পদ্ধতিতে নির্ণয়ের জন্য যে অত্যাধুনিক মেশিনটি বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা হলে ফাইব্রোস্ক্যান মেশিন। এই মেশিনের মাধ্যমে লিভারে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিকে বলা হয় ফাইব্রোস্ক্যান অব লিভার।

ফাইব্রোস্ক্যানে কি করা হয়?
ফাইব্রোস্ক্যানের মাধ্যমে লিভার সিরোসিসসহ লিভার শক্ত হয়ে যাওয়ার বিভিন্ন ধাপ সুচারুভাবে নির্ণয় করা যায়। এই পরীক্ষার উল্লেখযোগ্য দিক হলো লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন অথবা লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তির লিভারের অবস্থা প্রাথমিকভাবেই নিরূপন করা সম্ভব। ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষার ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিভারের জটিল রোগ অতি দ্রুত নিরুপনের পাশাপাশি তার সম্ভাব্য জটিলতা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদান এবং চিকিৎসা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তা মূল্যায়ন করা সম্ভব।
ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষা প্রয়োজনীয় কেন?
লিভারের অবস্থা জানার জন্য যে কোন সুস্থ মানুষ রুটিন পরীক্ষা হিসেবে ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষাটি করতে পারেন। লিভারের সে সমস্ত দীর্ঘমেয়াদী রোগের ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষা করানো উচিত সেগুলো হলো—
- নন এ্যালকোহোলিক ও এ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজেস,
- ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস (হেপাটাইটিস বি ও সি),
- অটোইমিউন হেপাটাইটিস (মহিলাদের বেশি হয়),
- প্রাইমারী বিলিয়ারী সিরোসিস (মহিলাদের বেশী হয়)
- প্রাইমারী ফাইব্রোজিং কোলনেজাইটিস
- হেমোক্রোমাটোসিস,
- উইলন্স ডিজিজ ইত্যাদি
ফাইব্রোস্ক্যান কিভাবে করা হয়?
এই পরীক্ষার জন্য রোগীকে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হয়। রোগী তার পিঠ বিছানায় দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়বেন এবং তার ডান হাতে মাথার পেছনে লম্বা করে ছড়িয়ে দেবেন। এরপর যিনি ফাইব্রোস্ক্যান করবেন তিনি একটি পানি সমৃদ্ধ জেল জাতীয় পদার্থ পেটের ডানদিকে উপরের অংশে চামড়ার উপর প্রয়োগ করবেন এবং ফাইব্রোস্ক্যান মেশিনের প্রোব নামক অংশটি নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করবেন এবং হালকা চাপ দিয়ে প্রোবটিকে নাড়াতে থাকবেন। নির্দিষ্ট স্থান থেকে ১০টি রিডিং নিয়ে পরবর্তীতে তা সমন্বয় করে চিকিৎসক এই পরীক্ষার ফলাফল নিরুপন করবেন।
এই পরীক্ষার সুবিধাসমূহ কি?
- এই পরীক্ষায় অতি স্বল্পতম সময়ে (৫-১০ মিনিটে) লিভারের জটিল রোগ সমূহ নিরুপণ করা যায়।
- পরীক্ষা ব্যথামুক্ত এবং কোনো অপারেশনের প্রয়োজন হয় না।
- পরীক্ষাটি সহজ, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য।
- পরীক্ষাটি লিভার বায়োস্কোপি পরীক্ষার বিকাশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
- সব বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী (শিশু থেকে বৃদ্ধ)
- পরীক্ষাটি বারবার করা যায় এবং কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
- লিভারের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা পরবর্তী ফলোআপের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।
- এই পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না।
- পরীক্ষাটির মাধ্যমে লিভারে চর্বির পরিমাণ জানা যায়।
- সর্বোপরি লিভারের রুটিন পরীক্ষা হিসেবে ফাইব্রোস্ক্যান একটি আধুনিক পদ্ধতি।
কোন অবস্থায় করা যায় না?
যে সমস্ত অবস্থায় ফাইব্রোস্ক্যান করা যায় না—
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে
- পেটে পানি জমলে বা এসাইটিস থাকলে,
- হার্টে কোনো ইলেকট্রিক ডিভাইস (যেমন পেসমেকার) থাকলে।
বাংলাদেশে ফাইব্রোস্ক্যানের ব্যবহার
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ল্যাবএইড এই পরীক্ষাটিকে রোগীদের লিভারের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যাপকভাবে প্রচলন করতে সক্ষম হয়েছে। ল্যাবএইডের বিভিন্ন শাখা থেকে এই পরীক্ষার সুযোগ নিয়ে রোগীরা তাদের লিভারের বিভিন্ন জটিল রোগ অতি সহজেই নিরুপন করতে সক্ষম হচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করছেন।

ডাঃ একে, এম, সামসুল কবীর
সহযোগী অধ্যাপক
হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল