বিভিন্ন বয়সে নারীদের পুষ্টি

বিভিন্ন বয়সে নারীদের পুষ্টি

কামরুন আহমেদ

পুষ্টি হলো স্বাস্হ্যকর জীবনের মূল ভিত্তি। নারীদের পুষ্টি আলোচনা যখন শুরু হয় তখন এটি একটি বিস্তৃত ও গভীর বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যা বিভিন্ন বয়সী নারীদের স্বাস্হ্য ও জীবনের প্রতিটি ধাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ নিশ্চিত করা শুধু তাদের স্বাস্হ্যের জন্য নয়, পুরো সমাজের সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি নারীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্হতা নির্ভর করে তাদের পুষ্টির ওপরে, যা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, কাজের সক্ষমতা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক। শিশু, কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্কা নারী এই তিনটি বয়সের ধাপে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের সকলেরই সুষম ও সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন।

শিশুর পুষ্টি

নারীদের পুষ্টি মূলত তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (CDC) মতে, সঠিক পুষ্টি শিশুদের স্বাস্হ্যকর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং এটি জীবনের প্রথম ছয় বছরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুরা তাদের ভবিষ্যৎ স্বাস্হ্য ও শক্তির ভিত্তি স্থাপন করে এই সময়ে যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে । শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ যথেষ্ট। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ দেওয়া প্রয়োজন। ছয় মাসের পরে বাড়তি খাবার দিতে হবে। তবে খাবার হতে হবে জীবাণুমুক্ত। দুই বছর থেকে বাড়ির সব স্বাভাবিক খবর খেতে পারবে। পাঁচ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্কের বৃদ্ধি হয় এবং শারীরিক বিকাশ হয়, এই সময় শিশুর সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে, তাই শিশুকে সব পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।

কিশোরী বয়সের পুষ্টি

এ সময় শারীরিক ও হরমোনজনিত পরিবর্তন হয়। এ সময় পুষ্টিকর খাবার এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। WHO-এর তথ্যমতে, কিশোরী বয়সে মেয়েদের পুষ্টি ঘাটতি থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজননস্বাস্হ্য এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সঠিক পুষ্টির অভাবে কিশোরী মেয়েরা এনিমিয়া, অপুষ্টি ও অন্যান্য স্বাস্হ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে বিশেষ কিছু খাদ্য উপাদান একান্ত জরুরি। এই সময় খেয়াল রাখতে হবে, খাদ্যতালিকায় মাইক্রো- নিউট্রিয়েন্ট এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের যেন অভাব না থাকে। বিশেষ করে প্রাণিজ প্রোটিন—মাছ, মাংস, দুধ, ডিম প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতে রাখতে হবে। পেশি বৃদ্ধি এবং হাড়ের গঠন হয় এ সময়। ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়ামজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকাতে রাখতে হবে।

বাংলাদেশে ৪৩% কিশোরী রক্ত স্বল্পতায় ভুগে থাকে। তাই প্রতিদিন ১৬ মিলিগ্রাম আয়রন কিশোরীদের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। সবুজ শাকসবজি, বিট ও আঙুর আয়রনসমৃদ্ধ খাবার।

পূর্ণ বয়স্ক নারীদের পুষ্টি

পুষ্টি ও সুষম খাদ্য গ্রহণ তাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্হ্য রক্ষা করতে এবং বিভিন্ন বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পূর্ণ বয়স্ক নারীদের ম্যাক্রো ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকাতে রাখতে হবে।

একজন পূর্ণ বয়স্ক নারীর জীবনচক্রের কারণে কিছু বিশেষ উপাদানসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হয়। এ সময় নারীদের শারীরিক কিছু পরিবর্তন আসে। যেমন—নারীর প্রেগন্যান্ট অবস্হা, স্তন্যদাত্রী অথবা মেনোপোজ চক্রেও থাকতে পারেন। তাই ম্যাক্রো আর মাইক্রোনিউট্রিশনসমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ওমেগা ৩, ভিটামিন বি ১২ যেন তার খাবারে থাকে সেই দিকে লক্ষ রাখা দরকার।

এভাবে শিশু, কিশোরী, পূর্ণ বয়স্ক নারী এই তিনটি ধাপে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিভিন্ন হলেও সবার ক্ষেত্রে সুষম ও সঠিক পুষ্টি অপরিহার্য। তাই নারীদের পুষ্টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্হতা এবং সামগ্রিক জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব। এই অনুচ্ছেদে বিভিন্ন বয়সে নারীদের পুষ্টিবিষয়ক বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।


কামরুন আহমেদ

কামরুন আহমেদ

সিনিয়র পুষ্টিবিদ
চেম্বার : ল্যাবএইড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp