মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোম : অপসারণে লেজার ট্রিটমেন্ট

মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোম : অপসারণে লেজার ট্রিটমেন্ট

ডা. ফারিবা মজিদ

আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই কমবেশি লোম আছে। কিন্তু নারী-পুরুষভেদে লোমের ধরন ভিন্ন হয়। নারীদের দেহে অনেক পাতলা ও হালকা লোম থাকে। পুরুষদের থাকে ঘন, কালো লোম। কিন্তু, যদি এর বিপরীত হয় অর্থাৎ কোনো মেয়ের শরীরে যদি ছেলেদের মতো ঠোঁটের ওপরে ও থুতনিতে, গালের দুই পাশে, বুকে, পিঠে, পেটে ও ঊরুতে অপ্রয়োজনীয় লোম গজায় তাহলে তা খুবই অস্বস্তিকর ও চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েটিকে পরিবার ও সমাজে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এতে সে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কখনো চেষ্টা করে নিজে নিজে লোমগুলো কেটে ফেলার। এতে সমস্যার সমাধান না হয়ে উল্টো আরও বেড়ে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে কার্যকর চিকিৎসার মাধ্যমে অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করা সম্ভব। অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যাকে ‘হারসুটিজম’ বলা হয়।

মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোম : অপসারণে লেজার ট্রিটমেন্ট

অবাঞ্ছিত লোম কেন হয়

সাধারণত, হরমোনজনিত সমস্যায় মেয়েদের শরীরে অবাঞ্ছিত লোম হয়। এন্ড্রোজেন নামক হরমোন মেয়েদের শরীরে খুব কম পরিমাণে থাকে। পুরুষদের বেশি থাকে। কিন্তু কোনো কারণে মেয়েদের দেহে এ হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে অতিরিক্ত লোম গজায়; কণ্ঠ ভারী হয়ে যায়। এ ছাড়া, আরও বিভিন্ন কারণে অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা হতে পারে। যেমন—

  • পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস রোগে মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত লোম গজায়, ওজন বৃদ্ধি পায় ও গর্ভধারণে সমস্যা হয়।
  • পিটুইটারি গ্রন্থি বা এড্রেনাল গ্রন্থিতে যদি টিউমার বা সিস্ট হয় তাহলে এন্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে গিয়ে অবাঞ্ছিত লোম হয়।
  • শরীরে স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা হতে পারে।
  • থাইরয়েড বা অন্য কোনো হরমোনজনিত সমস্যাহরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নিলে শরীরে অতিরিক্ত লোম দেখা দিতে পারে।
  • জন্মনিরোধক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অবাঞ্ছিত লোম হতে পারে।
  • স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ও রং ফর্সাকারী বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করলে অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা হয়।
  • নারীদের মেনোপজের পর শরীরের হরমোন পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন অতিরিক্ত লোমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অনেক সময় বংশগতভাবেও শরীরে অতিরিক্ত লোম থাকে।

অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে লেজার চিকিৎসা

অতিরিক্ত লোম অপসারণে অনেকে ব্লিচ, শেভিং, ওয়াক্সিং ও থ্রেডিং করেন। কেউ কেউ বিভিন্ন রকমের ক্রিমও ব্যবহার করে থাকেন। তবে অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে সবচেয়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি হলো লেজার।
লেজার চিকিৎসায় লেজার রশ্মির সাহায্যে আলোর একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে ত্বকের গভীরে আলোর বিম প্রয়োগ করা হয়। এতে লোমের গোড়ায় যে লোমবৃদ্ধিকারী স্টেম সেল বা কোষগুলো থাকে, তা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়। এটি চুলের ফলিকল ও ভালভকেও নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে লোমের বৃদ্ধি অনেকাংশেই কমে যায়।

যে ধরনের ত্বক ও চুলে লেজার সবচেয়ে ভালো কাজ করে

মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোম : অপসারণে লেজার ট্রিটমেন্ট

আমাদের শরীরে দুই ধরনের মেলানিন থাকে— ইউমেলানিন ও ফিমেলানিন। মেলানিন আমাদের ত্বক ও চুলের রং নির্ধারণ করে। ইউমেলানিনের জন্য চুলের রং কালো বা বাদামি হয়ে থাকে। ফিমেলানিনের জন্য রং হয় সাদা বা লালচে। ইউমেলানিনে অর্থাৎ চুলের রং যদি কালো বা বাদামি হয় তাহলে লেজার পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তাছাড়া, শুষ্ক, তৈলাক্ত বা মিশ্র যেকোনো ধরনের ত্বকেই লেজার প্রয়োগ করা যায়। তবে অতিসংবেদনশীল ত্বকে লেজার রশ্মি প্রয়োগ করলে একটু ব্যথা ও লালচে ভাব হতে পারে, যা অল্পদিনেই ঠিক হয়ে যায়।

লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে কি অবাঞ্ছিত লোম স্থায়ীভাবে দূর করা যায়

লেজার একটি ব্যথামুক্ত ও স্থায়ী চিকিৎসাপদ্ধতি। ওয়াক্সিং অথবা থ্রেডিং প্রতি মাসেই করাতে হয়। কিন্তু লোমের ধরন ও বৃদ্ধি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর কয়েকবার লেজার চিকিৎসা নিলে অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব।

মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোম : অপসারণে লেজার ট্রিটমেন্ট

লেজার চিকিৎসার সুবিধা

  • এই পদ্ধতিতে ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় না।
  • কোনো রকম কাঁটাছেড়ার প্রয়োজন হয় না।
  • ত্বকের গভীর থেকে লোমের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
  • চিকিৎসার পর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা

লেজার চিকিৎসা নেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন—

  • লেজার চিকিৎসার অন্তত ৬ সপ্তাহ আগে থেকে ওয়াক্সিং ও থ্রেডিং করা যাবে না।
  • সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • বাইরে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
  • শরীরের যে স্থানে লেজার চিকিৎসা দেওয়া হবে, সে স্থানে ট্যাটু করা যাবে না।
  • লেজার অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে।
  • একজিমা বা অন্য কোনো চর্মরোগ থাকলে লেজার না করানোই ভালো।
  • গর্ভাবস্থায় লেজার চিকিৎসা নেওয়া যাবে না।

ডা. ফারিবা মজিদ

ডা. ফারিবা মজিদ

এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ)
এমসিপিএস, এফসিপিএস (চর্ম ও যৌন রোগ)
অ্যাডভান্স ট্রেনিং অন এস্থেটিক ডার্মাটোলজি (ডিডিআই)
চর্ম, যৌন, এলার্জি, কুষ্ঠ, লেজার ও কসমেটিক সার্জন
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড লেজার অ্যান্ড এস্থেটিক লাউঞ্জ

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp