লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন
অধ্যাপক ডাঃ নূরুদ্দীন আহমদ
লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন হলো লিভার সিরোসিস এ আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষার সর্বশেষ পদক্ষেপ। কারও হেপাটাইসিস ‘বি’ বা ‘সি’ ভাইরাস থাকলে এবং সময়মতো তা প্রতিরোধ না করলে ধীরে ধীরে লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারে রূপ নেয়। এ ধরনের রোগীদের শেষ চিকিৎসাই হচ্ছে লিভার প্রতিস্থাপন। অপারেশন এর মাধ্যমে এই রোগাক্রান্ত লিভার অপসারন করে সেই স্থানে দাতা ব্যক্তির সম্পূর্ণ বা আংশিক সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপন করে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন করা যায়।
মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল বা লিভারের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ অতিরিক্ত খেলেও লিভারে প্রদাহ হবার শঙ্কা থাকে। প্রদাহ অনেকদিন থাকলে লিভারে Fibrosis হয়ে লিভার কোষের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। একবার সিরোসিস হলে লিভার আর কখনই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না। সেক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসা হল ট্রান্সপ্লান্টেশন ।

আবার লিভার সিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার একসঙ্গে থাকলে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা।
কিছু মেটাবলিক অসুখের জন্যও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন করা হয়। শিশুদের জন্মগত কিছু বিলিয়ারি অসুখের জন্যও করা হয় লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন। সেক্ষেত্রে সাধারনত মা অথবা বাবার লিভারের অংশ প্রতিস্থাপন করা হয়।
লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন দুই ধরনের ক্যাডাভেরিক ও লিভিং রিলেটেড লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন। প্রথমদিকে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু হয়েছিল ক্যাডাভেরিক লিভার দিয়ে। কিন্তু ক্যাডাভেরিক লিভার পাওয়া খুবই কঠিন। ক্যাডাভেরিক লিভারের স্বল্পতার জন্য শল্য চিকিৎসকরা পরবর্তিতে লিভিং রিলেটেড লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু করেন। লিভিং রিলেটেড পদ্ধতিতে আত্মীয় যেমন ভাই, বোন, বাবা, মায়ের শরীরের লিভারের একটি অংশ নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। মানবদেহের লিভার একটি অঙ্গ হলেও এটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ডান অংশ ও অন্যটি বাম অংশ। যে কোনো অংশই প্রতিস্থাপন করা যায়। লিভারের একটি অংশ কেটে ফেলে দিলেও তেমন কানো অসুবিধে হয় না। কারণ লিভারের রিজেনারেটিভ ক্ষমতা থাকায় ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে লিভার আগের আকার ধারণ করে। লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন করার সময় দুটি অপারেশন থিয়েটার দুই টিম আলাদাভাবে কাজ করেন। এক রুমে লিভার দাতা এবং অন্য রুমে লিভার গ্রহীতার অপারেশন হয়। গ্রহীতার অকার্যকর লিভার সম্পূর্ণ অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করে দাতার লিভারের অংশ প্রতিস্থাপন করা হয়। পুরো অপারেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টা লাগে।
সারাবিশ্বে লিভার গ্রহীতার মৃত্যুঝুঁকি মাত্র ১০ শতাংশ হলেও লিভার দাতার কোনো মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। সুস্থ লোকের দেহ থেকে লিভারের কিছু অংশ কেটে নিয়ে সংযোজন করা হয়। সাধারণত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই দাতার লিভার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

অধ্যাপক ডাঃ নূরুদ্দীন আহমদ
এমবিবিএস, এফসিপিএস
লিভার রোগ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (জাপান ও ব্যাংকক)
লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক, লিভার বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল), ঢাকা।