লিভার সিরোসিস
অধ্যাপক (ডাঃ) স্বপন চন্দ্র ধর
লিভার সিরোসিস কি?
লিভার সিরোসিস লিভারের দীর্ঘমেয়াদী একটি রোগ। লিভারের প্রদাহজনিত কারণে লিভারের কোষগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে লিভারের ভিতরের স্বাভাবিক গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন হয় এবং লিভারের ভিতরে ফাইব্রোসিস হয়ে লিভারটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যায় এবং ইহার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।

লিভার সিরোসিস এর কারণ
বিভিন্ন কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে। যেমন—
- হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস।
- এ্যালকোহল।
- কিছু কিছু ওষুধ যেমন INH এবং Amiodarone
- অটোইমিউন হেপাটাইটিস।
- উইলসন্স ডিজিস।
- হেমোক্রোমাটাইটিস এবং
- ফ্যাটি লিভার ডিজিস।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোন কারণ পাওয়া যায় না। সেগুলোকে ক্রিপটোজেনিক সিরোসিস বলা হয়। উপরোক্ত কারণ গুলির মধ্যে আমাদের দেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বে লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ হল এ্যালকোহল।
লিভার সিরোসিস এর লক্ষণসমূহ
লিভার সিরোসিস দুই প্রকারের যথা (১) কমপেনসেটেড ও (২) ডিকমপেনসেটেড। কমপেনসেটেড সিরোসিসে লিভারের ভিতরে কিছু কিছু কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং অল্প মাত্রায় ফাইব্রোসিস হয়। এক্ষেত্রে লিভারের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে এবং রোগীর দেহে সাধারণত কোন লক্ষণ দেখা দেয় না।
ডিকমপেনসেটেড সিরোসিসে রোগীর শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। রোগীর চোখ হলুদ হয়ে যায় অর্থাৎ জন্ডিস হয়, পায়ে ও পেটে পানি আসে, ক্ষুদামন্দা, শরীর ক্ষীণ হয়ে যায়, গায়ে অল্প অল্প জ্বর থাকে এবং প্রসাবের পরিমাণ কমে যায়। এমন কি রক্তবমি ও কালো পায়খানাও হতে পারে।
প্রতিকার
কমপেনসেটেড সিরোসিস হলে চিকিৎসা দ্বারা কোনো রোগীর সম্পূর্ন সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি হেপাটাটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস দ্বারা সিরোসিস হয় তবে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়।
কিন্তু ডিসপেনসেটেড সিরোসিস এর কোন সু-চিকিৎসা নেই। আধুনিক চিকিৎসা দ্বারা কোন কোন ক্ষেত্রে রোগের গতি পরিবর্তন করা যায় কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ করা যায় না। এক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা হল লিভার প্রতিস্থাপন করা। লিভার প্রতিস্থাপন হল রোগীর লিভার ফেলে দিয়ে সুস্থ মানুষের লিভার রোগীর পেটে লাগানো। লিভার প্রতিস্থাপন দ্বারা কোন কোন ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু লিভার প্রতিস্থাপন অত্যন্ত ব্যায় বহুল। স্বল্প পরিসরে দেশে, ভারতে এবং উন্নত দেশগুলোতে লিভার প্রতিস্থাপন করা যায়।
প্রতিরোধ
Prevention is better than cure –এই বাক্যটি প্রতিটি রোগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিশেষ করে যে সকল রোগের কোন curative চিকিৎসা নেই। তাই আমাদের প্রত্যেককেই এই রোগ যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
প্রতিরোধের উপায়
- ছোট বড় সকলকে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা দিতে হবে।
- হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ যাতে শরীরে ঢুকতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
- এ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

অধ্যাপক (ডাঃ) স্বপন চন্দ্র ধর
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (গ্যাস্ট্রো),
এমএসিজি (ইউএসএ), এফআরসিপি (এডিন)
মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ
এস, এস, এম, সি ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।