হেপাটাইটিস ‘বি’কে ভয় নয়

হেপাটাইটিস ‘বি’কে ভয় নয়

ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী

হেপটাইটিস বি একটি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ ভালো হয়ে যায়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণে যকৃতের কার্যক্ষমতা হ্রাস, যকৃতের ক্যানসার অথবা সিরোসিসও হতে পারে। রক্ত, বীর্য অথবা শরীরের অন্যান্য তরল পদার্থের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। বড়দের ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয়।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ

অনেক ক্ষেত্রেই প্রথমদিকে কোন ধরণের উপসর্গ দেখা যায় না। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণের দুই থেকে তিন মাস পর এর এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো প্রকট হয়। হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হাল্কা থেকে মারাত্মক হয়ে থাকে।

  • শরীরের চামড়া ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
  • গাঢ় রংয়ের প্রসাব হওয়া
  • ক্ষুধা মন্ধা
  • ক্লান্ত এবং অবসাদ অনুভব করা
  • পেট ব্যথা
  • দীর্ঘ দিন ধরে জ্বর

মারাত্মক ক্ষেত্রে – রোগী অজ্ঞান হওয়া, এলোমেলো কথাবলা, খিচুনী হওয়া যাকে হেপাটিক  এনকেপালোপ্যাথি বলে।

এই সব রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা মাত্র ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন –

  • লিভার এনজাইম – ALT (SGPT),
  • HBsAg – এটা ভাইরাসের বহিরাবরন বা তার খোসা মাত্র – যা ভাইরাসের নিস্ক্রিয় অংশ
  • HBeAg – ভাইরাসের সক্রিয় অংশ
  • HBV-DNA – ভাইরাসের প্রাণ

কি ধরনের চিকিৎসা আছে

অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কার চিকিৎসার প্রয়োজন তা নির্নয় করেন।

বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে – জীবাণুনাশক ওষুধ সেবন  যেমন – অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ (ট্যাবলেট ও ইনজেকশন) মারাত্মক ক্ষেত্রে – যকৃত প্রতিস্থাপন।

শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ

হেপাটাইটিস-বি তে নবজাতকরা পিতামাতার মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস – বি ভাইরাস জন্মের সময় বাহক মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমিত হয়। এ ধরণের সংক্রমণকে ‘ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন’ বলা হয়। এ ছাড়া শৈশবে ও কৈশোরে খেলাধুলার সময় আঁচরের মাধ্যমে বাহক শিশু থেকে সুস্থ শিশুতে এ রোগ ছড়াতে পারে। একইভাবে সুচের মাধ্যমে নাক ও কান ফুটো করার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। আবার অশোধিত সিরিঞ্জ ও সুঁচ  দ্বারা এবং চুল কাটার সময়ও সংক্রমণ ঘটতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে’ ইপিআই ভ্যাকসিন সিডিউল’ অনুযায়ী ৩ ডোজ হেপাটাইটিস-বি টিকা দিলে এটি শিশুকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে।

আক্রান্ত হবার পর জীবন যাপন পদ্ধতি

  • নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখা।
  • অন্যের ব্যবহৃত সুঁচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার না করা এবং নিজের ব্যবহৃতটাও অন্যকে ব্যবহার করতে না দেয়া
  • আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যকে রক্ত অথবা অন্য কোন অঙ্গ দান করা থেকে বিরত থাকা
  • রেজার, ব্লেড এবং দাঁত মাজার ব্রাশ অন্যের সাথে আদান – প্রদান না করা
  • গর্ববতী মহিলা যদি হেপাটাইটিস বি – ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসককে জানাতে হবে যাতে গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি না হয়।

হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের উপায়

কতগুলো বিষয়ে সতর্ক থাকলে এ রোগ থেকে দুরে থাকা সম্ভব-

  • সেলুনে চুল, দাড়ি কাটার সময় আলাদা ব্লেড ব্যবহার করা
  • ইনজেকশন নেবার সময় ডিস্পোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
  • হেপাটাইটিস- বি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা অথবা নিরাপদ শারীরিক পদ্ধতি অবলম্বন করা।
  • শিরাপথে মাদক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
  • শরীরে ছিদ্র বা উলকি আঁকার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা
  • চিকিৎসক ও নার্সরা হেপাটাইটিস- বি রোগী চিকিৎসার সময় বাড়তি নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন।
  • যথা সময়ে হেপাটাইটিস- বি প্রতিষেধক টিকা নেওয়া।

ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী

এমবিবিএস (ডিএমসি), এফসিপিএস (মেডিসিন)
এমডি (গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি)
মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি বিভাগ
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp