হেপাটাইটিস ‘সি’ সচেতনতা

হেপাটাইটিস ‘সি’ সচেতনতা

ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস সি সবচেয়ে মারাত্মক। সাধারণত দূষিত রক্তের মাধ্যমে এবং বিশেষ করে একই সূচ দিয়ে মাদক সেবনসহ নানা ভাবে হেপাটাইটিস সি ছড়াতে পারে। এটি একটি সংক্রামক রোগ। বড়-ছোট সবারই এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আছে।

হেপাটাইটিস সি রোগের লক্ষণ

প্রথম দিকে হেপাটাইটিস ‘সি’র কোন লক্ষন ও উপসর্গ দেখা যায় না। সত্যিকার অর্থে লক্ষণ ও উপসর্গগুলো মৃদু বা হাল্কা এবং অনেকটা সাধারণ সর্দিকাশি-জ্বর বা ফ্লুর মতো হয়ে থাকে। সাধারণত যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে-

  • অবসাদ
  • জ্বর জ্বর ভাব
  • ক্ষুধামন্দা ও বমি বমি ভাব
  • মাংস পেশী এবং অস্থি সন্ধিতে সামান্য ব্যথা
  •  লক্ষন ও উপসর্গ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে

প্রাথমিক ভাবে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। পরবর্তীতে আলট্রাসনোগ্রাফি, ফাইব্রোস্ক্যান এবং প্রয়োজনে লিভার বায়োপসির (Liver Biopsy) মাধ্যমে যকৃতের টিস্যু পরীক্ষা করতে হতে পারে।

হেপাটাইটিস সি হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন যারা

  • স্বাস্থ্যকর্মী যিনি সংক্রমিত রক্তের সংস্পর্শে এসেছেন
  • জীবানুমুক্ত নয় এমন যন্ত্রপাতি দিয়ে যাদের শরীরে কোন অপারেশন হয়েছে
  • জীবানুমুক্ত নয় এমন যন্ত্রপাতি দিয়ে যারা দাঁতের চিকিৎসা করিয়েছেন
  • নানা প্রয়োজনে যাদের শরীরে রক্ত গ্রহন প্রয়োজন হয়
  • যারা সূঁচের মাধ্যমে মাদক সেবনে অভ্যস্তযাদের এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে
  • অপরিষ্কার বা জীবানুমুক্ত নয় এমন যন্ত্রপাতি দিয়ে উল্কি আঁকা
  • হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া শিশু যারা দীঘদিন যাবৎ হেমোডায়ালাইসিস (Hemodialysis) চিকিৎসা গ্রহন করছেন

এ রোগের চিকিৎসা

লিভার বিশেষজ্ঞের সম্পূর্ন তত্ত্বাবধানে এ রোগের  চিকিৎসা হওয়া বাঞ্চনীয়। নিয়মিত রক্ত এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনিই চিকিৎসার ধরন, ওষুধের মাত্রা ও স্থায়িত্ব নির্ধারন করবেন। সি-ভাইরাসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর এবং ব্যয়বহুল ইনজেকশন পেগইনটারফেরন ও রিবাভাইরিন জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ওষুধ এখন আমাদের দেশেও তৈরি হচ্ছে। সুখের খবর, এ রোগের জন্য ইনজেকশনের পরিবর্তে মুখে খাবার ওষুধও ইদানিং আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তা বাংলাদেশেও তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। রোগের কোন কোন পর্যায়ে এন্টিভাইরাল ওষুধসমূহ ব্যবহার অযোগ্য হতে পারে এবং কখনও কখনও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা যকৃত প্রতিস্থাপন করতে হতে পারে।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়

  • যে সমস্ত ওষুধ যকৃতের ক্ষতি করে সেগুলো বাদ দিতে হবে
  • সুষম খাবার গ্রহণ এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে
  • নিজের ব্যবহৃত টুথব্রাশ ও রেজার আলাদা রাখা
  • মদ্যপান থেকে বিরত থাকা
  • নিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের অভ্যাস গড়তে হবে
  • শিরাপথে মাদক সেবন এবং অন্যের ব্যবহৃত সূচ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে
  • শরীর ছিদ্র করা অথবা উল্কি আঁকার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

এমবিবিএস (ঢাকা), এমডি (হেপাটোলজি)
লিভার বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, হেপাটোলজি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp