কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া :হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনজনিত জটিলতা

কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া :হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনজনিত জটিলতা

ডা. মোঃ রসুল আমিন (শিপন)

কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া হলো হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন বা ছন্দপতন। অতিরিক্ত উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা কিংবা ভারী পরিশ্রমের কারণে ছন্দের হেরফের হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। সে ক্ষেত্রে বিশ্রাম নিলে হৃৎস্পন্দন আবার স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে। কিন্তু হৃৎস্পন্দন যদি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় বা কমে যায় এবং পুনরায় স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে না আসে, তবে তা হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। এটি হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনজনিত একটি রোগ। এ ক্ষেত্রে বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে রক্তজমাট, হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিওর, এমনকি আকস্মিক হৃদ্‌রোগে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

অ্যারিথমিয়া কী

প্রতি মিনিটে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দনের মাত্রা হলো ৬০ থেকে ১০০। এর চেয়ে কম বা বেশি হলে অর্থাৎ ৬০ -এর নিচে নেমে গেলে কিংবা ১০০ -এর বেশি হয়ে গেলে তাকে বলা হয় কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির অসুখ, হার্ট অ্যাটাকের ফলে সৃষ্ট কোনো ক্ষত কিংবা রক্তে ইলেকট্রোলাইটের অসামঞ্জস্যের কারণে কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া হয়ে থাকে।

অ্যারিথমিয়া কেন হয়

হৃৎস্পন্দন উৎপাদনকারী ইলেকট্রিক সিগন্যাল যে বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন হয়, তা ঠিকমতো কাজ না করলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। আবার, অনেক সময় এই ইলেকট্রিক সিগন্যাল হৃৎপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঠিকমতো প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন দেখা দেয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

  • বুক ধড়ফড় করা। মনে হতে পারে বুকের মধ্যে পাখা ঝাপটানো অনুভূতি হচ্ছে।
  • মাথা ঝিমঝিম করা এবং প্রবল ক্লান্তি অনুভব করা।
  • মনে হতে পারে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে গেছে বা ছটফট অনুভূতি।
  • হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।
  • বুকে ব্যথা ও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • মানসিক চাপ ও চোখে ঝাপসা দেখা।
  • জ্ঞান হারানো বা মূর্ছা যাওয়া। শরীর থেকে অপরিমিত ঘাম বের হওয়া।

কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়ার ধরন

ব্রাডিকার্ডিয়া : হৃৎপিণ্ড মিনিটে ৬০ বারের কম স্পন্দিত হলে তাকে ব্রাডিকার্ডিয়া বলে। সাধারণত ৬০ থেকে ৪০ -এর মধ্যে হৃৎস্পন্দন থাকলে তা শরীর মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু হার্ট রেট ৪০ -এর নিচে নেমে এলে তখন মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয় না।

ট্যাকিকার্ডিয়া : হৃৎপিণ্ড মিনিটে ১০০ বারের বেশি স্পন্দিত হলে তাকে বলা হয় ট্যাকিকার্ডিয়া। যেকোনো ধরনের উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, কিংবা অতিরিক্ত পরিশ্রম বা দৌড়াদৌড়ি করার কারণে হার্ট রেট বেড়ে যেতে পারে। তবে বিশ্রাম নিলে হার্ট রেট আবার স্বাভাবিক মাত্রাতে ফিরে আসে। কিন্তু ট্যাকিকার্ডিয়াতে হার্ট রেট স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায়।

কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়ার কারণ

  • হৃৎপিণ্ডের গঠনের পরিবর্তন হওয়া। যেমন, হার্টের মাংসপেশির রোগে সৃষ্ট কার্ডিওমায়োপ্যাথি।
  • হার্ট অ্যাটাক বা পূর্ববর্তী হার্ট অ্যাটাকের ফলে সৃষ্ট ক্ষত।
  • হার্টের করোনারি ধমনি বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • জন্মগতভাবে হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র এবং পারিবারিক হৃদ্‌রোগের ইতিহাস থাকা।
  • ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়া।
  • ঘুমের ভেতর শ্বাসনালি বাধাপ্রাপ্ত হলে কিংবা দীর্ঘদিন ঘুম কম হলে।
  • সর্দি ও অ্যালার্জির চিকিৎসায় ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
  • মাদক সেবন ও মদপান করা। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ।
  • হৃৎপিণ্ডের ইলেকট্রিক সিগন্যালে সমস্যা দেখা দেওয়া।
  • কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া প্রতিরোধে করণীয়
  • মাদক সেবন ও মদপান পরিহার করুন।
  • অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করুন।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
  • অ্যারিথমিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিলে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডা. মোঃ রসুল আমিন (শিপন)

এমবিবিএস, এমডি, এফএসসিএআই
ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট
সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চেম্বার : ল্যাবএইড লিমিটেড (ডায়াগনস্টিকস)

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp